top of page

    #বর্ণ_প্রথা ও এ বিষয়ে সবিশেষঃ

নতুন সংযোজন

#বর্ণ_প্রথা ও এ বিষয়ে সবিশেষঃ
প্রথমেই বলে নিই, হিন্দু সমাজে চারটি বর্ণ প্রচলিত আছে। যথাঃ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শূদ্র। আমরা মনে করি যে, একজন ব্রাহ্মণের পুত্রই ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়ের পুত্রই ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের পুত্রই বৈশ্য, শূদ্রের পুত্রই শূদ্র। আসলে ঘটনাটি সঠিক নয়।
এই সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে ব্রাহ্মণ কি, ক্ষত্রিয় কি, বৈশ্য কি এবং শূদ্র কি ?
ব্রাহ্মণ :- ব্রহ্মজ্ঞানে বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ব্যক্তি, যিনি সত্ত্বঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত।
ক্ষত্রিয় :- শাসক বা যোদ্ধা সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি, যিনি রজঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত।
বৈশ্য :- ব্যবসায় সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি, যিনি রজঃ ও তমঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত ।
শূদ্র :- শ্রমজীবী সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন শূদ্র, যিনি তমঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত ।
অর্থাৎ ব্রাহ্মণরা তপস্যা করেন, ক্ষত্রিয়রা শাসন ও যুদ্ধ করেন, বৈশ্যরা ব্যবসায় করেন এবং শূদ্ররা শ্রমবিক্রি করে জীবনযাপন করে । আমরা এর মাধ্যমে বুঝতে পারছি যে, যে যেরকম কর্ম করবে, সে সেই উল্লিখিত বর্ণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থাৎ একজন শূদ্রের পূত্র যদি ব্রহ্মজ্ঞানে দীক্ষিত হয় তাহলে সে ব্রাহ্মণ হবে এবং ঠিক এভাবেই একজন ব্রাহ্মণের পুত্র যদি শ্রমবিক্রি করে জীবনযাপন করে তাহলে সে শূদ্র হবে। এইযে বর্ণবিভাজন-এটা কিন্তু জন্মভেদে নয় কর্মভেদে।
বর্ণপ্রথা সম্পর্কে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন :-
চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ তস্য কর্তারমপিমাং বিদ্ব্যকর্তারসব্যয়ম (৪/১৩) অর্থাৎ,
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন আমি চার বর্ণের রচনা করেছি। কিন্তু আমি মানুষকে চারটি শ্রেণিতে বিভাগ করিনি। গুণের আধারে কর্মকে চারভাগে বিভক্ত করেছি। গুণ এখানে মানদন্ড। কর্ম একটাই-নিয়ত কর্ম, আরাধনা। অবস্থাভেদে এই কর্মকেই উঁচুনিচু শ্রেণিতে বিভাগ করা হয়েছে। সুতরাং ব্রাহ্মণের সন্তান হলেই যে ব্রাহ্মণ হবে এমনটি নয়। কোন শূদ্রের সন্তানও ব্রাহ্মণ হতে পারে। আবার শূদ্রের সন্তান যে শূদ্র হবে এমনটি নয়। কোন ব্রাহ্মণের সন্তান যদি শ্রমবিক্রি করে জীবনযাপন করে তাহলে সে শূদ্র বলে গণ্য হবে। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে নিজ নিজ কর্মের উপর।
কিন্তু কালক্রমে এই বর্ণপ্রথা জন্মগত হয়ে দাঁড়ায়, যেমন – ব্রাহ্মণের সন্তান হয় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়ের সন্তান হয় ক্ষত্রিয়, অনুরূপভাবে বৈশ্য, শূদ্র জন্মগত অধিকারে পরিচিত হয়। এর ফলে দেখা গেল একই পরিবারের চার সন্তান চার রকম গুণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। কিন্তু জন্মগত কর্মবিভাজনে তাদের চারজনকে একই কর্ম করতে হচ্ছে। ফলে কর্মের দক্ষতা এরা দেখাতে পারছে না। বর্ণভেদ পেশাগত ; অবশ্যই জন্মগত নয়। ঋগ্বেদের একটি মন্ত্রে বর্ণিত হয়েছে, একজন ঋষি বলছেন, আমি বেদমন্ত্র দ্রষ্টা ঋষি, আমার কন্যা যব ভেজে ছাতু বানিয়ে বিক্রি করে এবং আমার ছেলে চিকিৎসক। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, বর্ণভেদ বংশানুক্রমিক ছিল না। যদি বংশানুক্রমিক থাকত তাহলে তার কন্যা ও পুত্র আলাদা কর্ম করত না। 
আরও একটি উদাহরণ হচ্ছে বিশ্বামিত্র। যিনি একজন ক্ষত্রিয়ের রাজপুত্র ছিলেন এবং তিনি তপস্যার বলে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করেছিলেন। তাছাড়া বৈশ্য থেকে ব্রাহ্মণ হওয়ার উদাহরণও আমাদের সনাতন ধর্মের ধর্মগ্রন্থ গুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু একালেও বংশের ভিত্তিতে বর্ণ নির্ধারিত হচ্ছে। এ-বংশানুক্রমিক বর্ণভেদ প্রথা হিন্দুধর্মাবলম্বী একত্বের জন্য প্রতিবন্ধক এবং ভ্রাতত্বের বন্ধনের প্রতিকূল। সমাজ পরিবর্তনশীলতায় এ-প্রথার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই সমাজের সচেতনত পরিবারগুলো এ- প্রথার গোঁড়ামির প্রতিকূলে অবস্থান নিয়ে পারিবারিক কাজ সম্পাদন করছেন। পেশাগত বর্ণভেদের মূল লক্ষ্য ছিল পেশার উৎকর্ষসাধন ও নৈতিক গুণাবলির বিকাশের মাধ্যমে সামাজিক মঙ্গলসাধন করা। কিন্তু এই বর্ণপ্রথা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে সবাই এর বিরোধী। তাই এ-দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন বাঞ্ছনীয়।
   রাষ্ট্রীয় হিন্দু জাগৃতি মিশন
🙏🙏🙏🙏🙏

 

No 1.

আমি কে, কে আমার :: সমগ্র বিশ্ব,সমস্ত প্রাণী কেবল মাত্র এক প্রশ্ন এর উত্তর খোজার জন্য ব্যাস্ত ,  আমি কে ।আমার আপন কে। আপনাদের এই প্রশ্ন শুনে আশ্চর্য মনে হবে ? কিন্তু  কোটি কোটি মানবের মধ্যে কেও কেও জানি আমাদের আসল পরিচয় কি। বিশ্বের সকল মানবের জানার প্রয়জন  জে আমি কে , কি আমাদের প্রকৃত পরিচয়।   বেদ বলে, এহইচ প্রবোধ যথা সাধেজ্জ্ব , নছেতি ভি মহতী বিনোস্তী ( কেনো উপনিষদ:২/৫) আর এ মানব ( আমি কে) এই প্রশ্নের মহত্ব উত্তর জানা খুবই আবশ্যক হয়।  এই প্রশ্নের উত্তর না জানার কারণে কোটি কোটি মানব জীবন , ভোগে আমাদের নষ্ট হই গেছে। : বেদ বলে: সর্গে সু বোহ কল্পে দুঃখ ভুঘতী।  অনেক প্রকার দুঃখ, অনেক প্রকার বন্দন, যেমন  শারীরিক, মানসিক, আর ও অনেক রকম যন্ত্রণা আমরা পৃথিবীতে দেখতে পাই , সব কিছু ভোগতে হবে , যদি মানব শরীর পেযেও না জানি আমি কে, এই মানব শরীর সব সময় পাবে না , এই কথা মনে রাখতে হবে। ৪ আরব,২৯ কোটি ৮০ হাজার বর্ষ , তাকে ব্রহ্মার ১ দিন হই।  সেই হিসাবে ব্রহ্মার আযু ১০০   বছর ,  আমি কে প্রশ্নের উত্তর না জানলে অনন্ত কল্পে ,আমরা মানব জীবন নষ্ট করবো।     এই সংসারে   শুধু মাত্র ২ প্রকার তত্ব ই দেখা যাই,  ১ চেতন ২ জর ,  তৃতীয় কোনো তত্ব দেখা যাই না।  জর তত্ব কি, জল, আগুন, পৃথিবী, এই তত্ত্বের কোনো জ্ঞান শক্তি নেই,  চেতনা নেই, মানব কেবল মাত্র চেতন হই। চলতে ,ফিরতে, সিদ্বান্ত নিতে পারে। এই দুই ছাড়া আর কোনো তত্ব নেই। যতক্ষণ আমরা জীবিত মানুষ বলে রাম যাচ্ছে ,কেও বলে লক্ষণ যাচ্ছে, কিন্তু মরে যাবার পর , বলে রাম চলে গেছে, ওটা তো রামের শরীর (চিন্তা করুন) তাহলে কে চলে গেছে, এক চেতন আমি, আর এক জর আমি, ইহা কে চলে গেছে চেতন চলে গেছে জর পরে আছে ( তাহলে আমরা শরীর নই বুজলাম ) আমরা আত্মা তাহলে কে,আমাদের পরম আত্মীয়। (চিন্তা করুন)।             উদ্ধব ভগবান কে জিজ্ঞেস করেছিলেন সব থেকে বড়ো মূর্খ কে, ভগবান উত্তর দিয়ে ছিলেন , যে মানব নিজেকে শরীর মেনে নেয় সে সব থেকে বড় মূর্খ যত বড়ো সংসারী পণ্ডিত হোক না কেনো।   এই সব রোজ দেখছি ,দেখেও আমরা অন্ধ সেজে আছি ,রোজ লোক মরছে , চেতন বেরিয়ে যাচ্ছে , জর পরে আছে, তার পর ও আমরা নিজেদের শরীর মানি,( এত বড়ো মূর্খ আমরা)  শরীর এই মা, বাবা, ছেলে , মেয়ে, পতী, পত্নী দের আপন ভাবছি , কিন্তু যেহেতু পরম্আত্মা আমাদের আসল আত্মীয় ,সেই অনুসারে সারা বিশ্বেও আমাদের আপন ।   ভাগ  #১

 No 2.

অবতারতত্ত্ব

          অবতার কাকে বলে?

করুণাময় ঈশ্বর কখনো কখনো জগতের প্রয়োজনে নিত্যধাম থেকে মর্তধামে নেমে আসেন।
নেমে আসাকে অবতার অবতরণ বলে।
ঈশ্বর কখনো কখনো রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। তখন তাঁকে বলা হয় অবতার। 

অবতারকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
যথা- ১/অংশ অবতার 
        ২/শক্ত্যাবেশ অবতার ও 
        ৩/গুণাবতার।

১/ অংশাবতার : ঈশ্বরের অপূর্ণাঙ্গ অবতারকে অংশ অবতার বলা হয়। যেমন- মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, বুদ্ধ ও কল্কি।

২/শক্ত্যাবেশ অবতার : যে অবতার ঈশ্বরের শক্তির সাধারণ প্রকাশ বা আবেশ ঘটে তাকে শক্ত্যাবেশ অবতার বলে। যেমন- সনক, পৃথু, ব্যাস প্রভৃতি মুনি।

৩/গুণাবতার : সৃষ্টি, পালন ও ধ্বংসের বিশেষ গুণ নিয়ে যখন ঈশ্বর আবির্ভূত হন তাকে গুণাবতার বলে।
যেমন- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব।

জগৎ ঈশ্বরের সৃষ্টি। এই জগৎ সব সময় এক রকম থাকে না।জগৎ পরিবর্তনশীল। মাঝে মাঝে এখানে নেমে আসে ঘোর দুর্যোগ। অশুভশক্তির কাছে পরাজিত হয় শুভশক্তি। মানুষ ধর্মকে ভুলে অধর্মকে আশ্রয় করে।
চারদিকে শোনা যায় দুঃখের আর্তনাদ। এ অবস্থা দেখে কিছু মহাপ্রাণ ব্যাক্তির হৃদয় কেঁদে উঠে। 
ঈশ্বরের নিকট জানায় দুঃখমুক্তির আকুল প্রার্থণা।
করুণাময় ঈশ্বর তখন ব্যাথিত হয়ে উঠেন। তিনি ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। অশান্তি দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আসেন।
দুষ্কৃতিকারীদের বিনাশ, সাধুদের ত্রাণ ও ধর্ম সংস্থাপনের জন্য পৃথিবীতে জীব বা মনুষ্যরূপে আসেন তখন আমরা তাঁকে বলি অবতার।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন–

"যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজামহ্যম্।।
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।

সরলার্থ: যখনই পৃথিবীতে ধর্মের গ্লানি হয় অধর্ম বেড়ে যায়, তখনই আমি অবতীর্ণ হই। আমি অবতীর্ণ হয়ে সাধুদের পরিত্রাণ করি। দুষ্টের বিনাশ করি এবং ধর্ম স্থাপন করি।

অবতারের এই কাজটি 
১/দুষ্কৃতিকারীদের দমন
২/সাধুদের পরিত্রাণ ও
৩/ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা। ৪/ সকল মানবের আত্ম দর্শন করা ৫/ ভক্তি মার্গ স্থাপন করা । রাষ্ট্রীয় হিন্দু জাগৃতি মিশন , জয় শ্রী কৃষ্ণ জয় মা ভারতী

20210531_202959%255B1%255D_edited_edited

No 3.

ধর্মই সকল সুখের মূল( রাষ্ট্রীয় হিন্দু জাগৃতি মিশন এর একটি ভাবনা)
ধর্ম এবং রাজশক্তি 

ধর্ম একটি বিমূর্ত সত্ত্বা। এ সত্ত্বা মূর্তিমান হয় ব্যক্তি গোষ্ঠীর সদাচারে। জগতকে ধারণ করে আছে ধর্ম। তাই জগতের সকল সুখের প্রধান উৎস ধর্ম। ধর্মের শুদ্ধ আচরণে মানুষ কীর্তিমান হয়ে সুখ লাভ করে এবং পরিশেষে মুক্তি লাভ করে। বিপরীতে অর্ধমের আচরণে জগত পাপ দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে সর্বদা নিম্নগামী হয়। ধর্মের দুটি সত্ত্বা, একটি আধ্যাত্মিক ; অন্যটি ব্যবহারিক। ধর্মের আধ্যাত্মিক অংশটিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং শাশ্বত। কিন্তু আধ্যাত্মিক অংশে পৌঁছাতে হলে ব্যবহারিক অংশ সাধারণত অতিক্রম করে যেতে হয়। বিষয়টি উপরে ওঠাতে সিঁড়ির এক একটা ধাপের মত; একটি ধাপকে অতিক্রম করেই, তবে অন্য ধাপটিতে যেতে হয়। আধ্যাত্মিকতায় অর্থ এবং রাজশক্তি খুব একটা প্রয়োজনীয় নয়। কিন্তু  ব্যবহারিক বা আনুষ্ঠানিক ধর্মের আয়োজনে অর্থ এবং রাজশক্তির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অর্থ না থাকলে মানবের সংসারযাত্রা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে যায়। অর্থদ্বারা ধর্মের বিভিন্ন বাহ্যিক সদাচার দান, তীর্থযাত্রা, সেবা সহ বিবিধ লোককল্যাণ অনায়াসে করা যায়। তবে অর্থের  সাথে সাথে আর একটি বিষয় অত্যন্ত জরুরী, তা হল রাজশক্তি বা রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশীদারি হওয়া। জগতের অধিকাংশ মতবাদই অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রচারিত। অর্থ এবং রাজশক্তি এ দুটি মুখ্য ক্ষমতা মানুষের অন্যান্য গৌণ সকল ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রিত করে। বিষয়টি অর্থশাস্ত্রের প্রণেতা চাণক্য তাঁর দূরদৃষ্টিতে লক্ষ্য করেছেন।

সুখম্য মূলং ধর্ম।
ধর্মস্য মূলমর্থঃ।
অর্থস্য মূলং রাজ্যম্।
রাজ্যমূলমিন্দ্রয়জয়ঃ।
(চাণক্য সূত্র:২-৫)

"সুখের প্রধান কারণ ধর্ম।ধর্মের প্রধান কারণ হল অর্থ। অর্থলাভের প্রধান কারণ রাজ্য। রাজ্য রক্ষার প্রধান সহায় হল ইন্দ্রিয়জয়।"

প্রায় আড়াইহাজার বছর আগের অর্থশাস্ত্রকার চাণক্যের এ কথাগুলো এদেশীয় অধিবাসী বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় সম্যক উপলব্ধি করতে পারেনি।কথাগুলো যদি ঠিকঠাক তারা উপলব্ধি করতে পারত ; তবে আজ তাদের ইতিহাস অন্যরকম হয়ে যেত। বিদেশিদের দ্বারা তাদের বারবার পরাধীন হতে হত না। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীরা ভারতবর্ষে গত এক সহস্রাব্দকালের অধিক সময় ধরে  নিরবচ্ছিন্ন  নৃশংসতা চালিয়েছে। সেই নিরবচ্ছিন্ন  নৃশংসতা হয়ত করতে পারত না, বাধাগ্রস্ত হত। পৃথিবীর অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী যখন পরিমাণগত (Quantitative) মানের দিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকে ছিল ; তখন এদেশের প্রাজ্ঞজনেরা গুণগত (Qualitative) মানের দিকেই তাদের সম্পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিল। পরিণতিতে যা হওয়ার, তাই হয়েছে। সংখ্যাধিক্যের জোরে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাই হয়েছে, যা কাম্য ছিল না। এদেশীয় ইতিহাস তার সাক্ষী। পৃথিবীর ইতিহাস বলে, ক্ষমতার চাকা গুণগত এবং পরিমাণগত এ দু'ভাবেই জগতে যুগপৎ অতিক্রম করে। কখনো এ চাকা থামে না, মানুষকে এ ঘুর্নায়মান চাকার সাথেই সাধ্যমত পথ চলতে হয়। যারা চলতে পারে না তারা পিছিয়ে পড়ে। ইতিহাস তাদের ভুলে যায়।

ক্ষমতার তো বটেই, ধর্মের প্রসারেও পরিমাণগত আধিক্য অপরিহার্য। যত মহৎ আদর্শই হোক না কেন লোকজন বা অনুসারী না থাকলে, সে আদর্শ হারিয়ে যায়। তাই পরিমাণগত এবং গুণগত দুটি বিষয়কেই সমানভাবে ও অঙ্গাঙ্গীকভাবে গ্রহণ করতে হয়। দুটি বিষয় একটি অন্যটির পরিপূরক। সম্রাট অশোক মৌর্য সাম্রাজ্যের রাজকোষ শূন্য করে দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বৌদ্ধ শ্রমণদের পাঠিয়ে বৌদ্ধমত প্রচার করেছেন। এমনকি এ কাজে তার ছেলে মহেন্দ্র এবং মেয়ে সঙ্ঘমিত্রাকেও যুক্ত করেন। তারা রাজকন্যা রাজপুত্র হয়েও ধর্ম প্রচারের জন্যে সিংহলে (শ্রীলঙ্কা) যায়। সম্রাট আশোকের পরিমাণগত প্রচেষ্টার ফলে, বৌদ্ধমতবাদ আজ শ্রীলঙ্কা, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড সহ পূর্ব এশিয়ার সিংহভাগ জুড়ে অবস্থান করছে। সম্রাট অশোক যদি শুধু গুণগত মানের দিকেই সকল ঝোঁক দিতেন, তবে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এভাবে বৌদ্ধমতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়ত হত না। সম্রাট অশোক পরবর্তীতে পৃথিবীতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখি রোমান সম্রাট Constantine এর জীবনে। তিনি খ্রিস্টমত অবলম্বন করেন, এবং সেই মতবাদ প্রচারে যদি মেতে না উঠতেন, তাহলে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে আজ এত খ্রিস্টান সম্প্রদায় হত না। ইউরোপ জুড়ে প্রাচীন গ্রিক এবং রোমান দেবদেবীরা তবে আজও রাজত্ব করত। আজকে ইউরোপে প্রাচীন গ্রিক এবং রোমান ধর্মাবলম্বীরা নেই। তাই মানুষের সাথে সাথে তাদের দেবতারও হারিয়ে গেছে। এত শিক্ষা দীক্ষায় এগিয়ে থাকার পরেও গ্রিক এবং রোমানদের পূজিত দেবতারা জিউস, পোসেইডন, হেডেস, থিওস, আফ্রোদিতি, জুপিটার, জুনো, মিনার্ভা, নেপচুন ও প্লুটো এ সকল প্রমুখ দেবতারা আজ কোথায়? শুধু দেবতাদের ভাঙা মন্দিরগুলো এবং বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত তাদের মূর্তিগুলো পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ হিসেবে প্রাচীন গর্বিত ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলছে।

আধ্যাত্মিক ধর্ম মানুষের অন্তঃস্থিত বিষয়, কিন্তু ব্যাবহারিক ধর্ম টিকে থাকে অর্থনৈতিক শক্তি, রাজশক্তি, সংখ্যাধিক্য এবং বাহুবলের জোরে। এ বিষয়গুলোর যারা সুসম্মিলন করতে পেরেছে, তারাই পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে। এ জগত 'বীরভোগ্যা বসুন্ধরা'; যারা বীর, যারা নির্ভীক তারাই টিকে থাকে। যারা বিপদে ভীত হয়ে পালিয়ে যায়, রাজশক্তিও তাদের থেকে দূরে চলে যায়। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় (০২.০৩)
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কথা বলা শুরু করেছেন, অর্জুনকে হৃদয়ের ক্ষুদ্র দুর্বলতা ত্যাগ করে উঠে দাঁড়াতে এবং ক্লীবতা কাপুরুষতা পরিত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়ে।শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখে বলা প্রথম শ্লোকগুলি এবং সঞ্জয়ের মুখে বলা গীতার শেষ শ্লোকটি খুবই তাৎপর্যময়, মাহাত্ম্যপূর্ণ এবং ইঙ্গিতবহ ;  কথাগুলি বর্তমানের হিন্দুজাতির জন্যে খুবই প্রাসঙ্গিক। 

যত্র যোগেশ্বরঃ কৃষ্ণো যত্র পার্থো ধনুর্ধরঃ।
তত্র শ্রীর্বিজয়ো ভূতিধ্রুর্বা নীতির্মতির্মম।।
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা:১৮.৭৮)

"যেখানেই যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং ধনুর্ধারী রক্ষাকারী পার্থ থাকবে; সেখানেই সর্বদা শ্রী, বিজয়, উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি এবং ঐক্যবদ্ধতার অখণ্ডিত রাজনৈতিক নীতি সর্বদাই বিরাজ করবে।"

শুধুমাত্র ধর্ম ধর্ম করলেই হবে না; ধর্মকে রক্ষাকারী সক্রিয় ধনুর্ধারী পার্থদেরও অত্যন্ত প্রয়োজন আছে। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায়, এমন অনেক জাতি সম্প্রদায় আছে, তাদের মধ্যে প্রচুর সংখ্যক জ্ঞানীগুণি ধর্মপ্রাণ ব্যাক্তি আছেন; কিন্তু তাঁদের জনসংখ্যা নেই, অনুগামী নেই। ব্যক্তিগতভাবে তাঁরা স্মরণীয় হলেও তাঁদের মতবাদ এবং দর্শনের সিংহভাগই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। এর বড় উদাহরণ গ্রিকের সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল এর মতো প্রখ্যাত দার্শনিকেরা। মানুষ ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের স্মরণ করলেও, প্রাচীন গ্রিক দেবদেবীদের সম্পর্কিত ধর্মদর্শনের পরিমাণগত প্রবৃদ্ধি হয় নি। আজ তাই সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল এর মতো বিখ্যাত দার্শনিকদের পূজিত দেবতারা পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে, শুধু অনুসারীর অভাবে। সত্যদ্রষ্টা জ্ঞানী অনেকে থাকার পরেও, অনুসরণকারী অনুগামী না থাকায় জগতের অনেক মহত্তর মতবাদ লুপ্ত হয়ে গেছে। এর বিপরীতে পৃথিবীতে অনেক নৃশংস মতবাদও (ইসলাম) ধর্মের নামে স্থাপিত হয়েছে, শুধু অনুগামীদের সংখ্যাধিক্যের কারণে। তাই ধর্মের ব্যবহারিক  প্রাতিষ্ঠানিক রূপের জন্যে অর্থ এবং রাজশক্তি অনিবার্য। 

রাজশক্তি বা ক্ষমতার অংশীদার হতে ও সনাতন ধর্ম পুনরায় স্থাপনের জন্যবিভিন্নকালে বিভিন্ন মহাপুরুষ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। এবং অনেক songoton তৈরি করেছেন তাঁদের মধ্যে রাষ্ট্রীয় হিন্দু জাগৃতি মিশন একটি পেরণা।  সকল প্রকার দাসত্বের মানসিকতা ত্যাগ করে ,ধর্মীয়, রাজকীয় মানসিকতা গড়ে তুলতে বলেন:

"যে জাতির রাজা নেই।
সে জাতি তাজা নেই।।

রাজশক্তি মূল শক্তি কহিনু নিশ্চয়।
রাজশক্তি বিনা কেহ বড় নাহি হয়।।

রাজা যদি হতে চাও ধর রাজভাব।
ভাব অনুযায়ী আসে ভাবের স্বভাব।।

জাতি ধর্ম যাহা কিছু উঠাইতে চাও।
রাজশক্তি থাকে হাতে যাহা চাও পাও।।

যে জাতির দল নেই।
সে জাতির বল নেই।।"

এ রাজশক্তি বা ক্ষমতার আর সনাতন ধর্মের সুরক্ষারঅংশীদার হতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্প্রদায়ের কল্যাণে দল গঠন করার কথা বলেনমিশন,মিশনের মতে, রাজা হতে চাইলে আগে রাজার রাজভাব গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ মানসিকভাবে একটি 'স্বয়মেব মৃগেন্দ্রতা' ভাব নিয়ে আসতে হবে। সিংহ বনে বাস করে। বনে তাকে কোন আনুষ্ঠানিক অভিষেক বা সংস্কার না করলেও সে তার আপন শক্তিবলেই বনের রাজা। তেমনিভাবে নিজের মধ্যেই অবস্থিত সুপ্ত সিংহভাবকে জাগ্রত করতে হবে। এ ভাবই তাকে একদিন ঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দিবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যে জাতির দল নেই, সে জাতির বলও নেই। গোষ্ঠীবদ্ধতা থেকেই বল আসে। যে জাতির রাজা বা নিজস্ব রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই ; সে জাতির ধর্ম, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ তাজা থাকে না, মৃতপ্রায় হয়ে যায়।রাজশক্তি ছাড়া কোন জাতিই বড় হতে পারে না। রাষ্ট্র একটি বড় কাঠামো, এ কাঠামোর মধ্যে যে সকল জাতিগোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ অংশী হতে পারে না, সে সকল অভাগা জাতি নিস্তেজ হয়ে ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকে। 

রাজশক্তির মাধ্যমে প্রচুর অর্থাগম হয়, এ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই রাজ্যকে দৃঢ় করে। অর্থের দ্বারা যেমন রাজ্যকে রক্ষা করা যায়, তেমনি উন্নতিবিধান করে লোককল্যাণ করা যায়। রাজশক্তি রক্ষার্থে প্রধানত সহায় হল ইন্দ্রিয়জয়। ইন্দ্রিয়কে জয় করতে না পারলে কখনই রাজত্ব বা ক্ষমতা টিকে থাকে না। তাই ক্ষমতাসীনদের সর্বপ্রথমে প্রয়োজন, তাদের নিজ ইন্দ্রিয়কে বশিভূত করে স্ববশে আনা। বাক, পানি, পাদ, পায়ু, উপস্থ- এ কর্মেন্দ্রিয় ; চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, ত্বক, জিহ্বা এ জ্ঞানেন্দ্রিয় ; এ কর্মেন্দ্রিয় এবং জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাথে যুক্ত আছে মন, বুদ্ধি, অহংকার এবং চিত্ত  নামক চারটি অন্তরিন্দ্রিয় সহ আমাদের সসর্বমোট চতুর্দশ ইন্দ্রিয়। এ চতুর্দশ ইন্দ্রিয়কে যে জয় করতে পারে, সেই রাজ্যকে দৃঢ় এবং শান্তিময় করতে পারে। অসংখ্য বড় বড় সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে গেছে, রাজশক্তির ইন্দ্রিয়ের লোলুপতার কারনে। সারা পৃথিবী জুড়ে আছে এর দৃষ্টান্ত। এ কারণেই বলা হয়, স্বাধীনতা অর্জনের থেকে রক্ষা করা অনেক কষ্টের। রাজশক্তি জিতেন্দ্রিয় না হলে কখনো ক্ষমতা দৃঢ় হয় না। তাইতো চেঙ্গিস খান, নাদীর শাহ্ সহ বিভিন্ন বিদেশি রাজারা ভারতবর্ষে  রাজ্যজয়ের নামে নির্বিচারে সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার করেছে। ফলশ্রুতিতে তারা তাদের বৃহত্তর সাম্রাজ্য ধরে রাখতে তো পারেননি, বরং পৃথিবীতে আজও তারা তাদের নৃশংসতার জন্যে কুখ্যাত হয়ে আছেন।

জয় শ্রী কৃষ্ণ জয় মা ভারতী  ( সবাই কে মনন , অনুধাবন করার জন্য অনুরোধ রইলো)

পুরাতন সংযোজন........

No 4.

শিব‬ শব্দটির অর্থ কি?

শিব শব্দের অর্থ মঙ্গল। তাই প্রতিটি মঙ্গলময় জিনিস বা ব্যাক্তিত্ব হল শিবস্বরূপ। আর মঙ্গলকে আশ্রয় না করে কইজন বাঁচতে পারে? তাই শিব সবারই আশ্রয়স্থল। তেমনি শিব ব্যাক্তিত্বের ব্যাক্তি মঙ্গলময় ও আশ্রয়দাতার প্রতিক।

‎শিবের‬ শম্ভু নামের তাৎপর্য কি?

তার আরেক নাম শম্ভু। শম মানে কল্যাণ এবং ভূ-ধাতু মানে হওয়া। যিনি কল্যাণরূপী হয়ে আছেন বা মূর্ত্ত কল্যাণ, তিনিই শম্ভু।কিভাবে প্রাণীগনের কল্যান করতে হয় তা তার আচরণে নিয়ত প্রকাশিত। আবার এই কল্যান করার পথে অনেক রকম বাধাবিঘ্ন এসে হাজির হয় বহু ঘাত-প্রতিঘাত আসে কারণ শুভ কাজে শতেক বাধা। সেই সব বিরুদ্ধশক্তি জয় করার ক্ষমতা একমাত্র শিব-ব্যাক্তিত্ব ব্যাক্তি স্বভাবজাত গুন কারণ তার উদ্দেশ্য মঙ্গলসাধন।সেই ব্যাক্তিত্বের ব্যাক্তি সব রকম বাধাবিঘ্ন কে জয় করার ক্ষমতা রাখে। সংসারের বিভিন্ন টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যে হলাহল রূপী অমঙ্গল ওঠে একমাত্র তিনি তা গ্রহণ করেন যাতে সংসার বিষমুক্ত থাকে। শিব মূর্তিতে শিবের নীলকন্ঠ তারই প্রতিক।

শিবের ভূতেশ নামের তাৎপর্য কি?

তাহার নাম ভূতেশ, ভূতভাবন।এখানে ভূত মানে “কাল” অর্থ্যাৎ যিনি বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎতেও থাকবেন। তাইতো তিনি ভূতনাথ অর্থ্যাৎ জীব আত্মা যা চিরন্তন সত্য ও শাশ্বত তার প্রভু।

নন্দী‬ এবং ভৃঙ্গী তাৎপর্য কি?

সর্বক্ষণের জন্য মহাদেবের কাছে আছে দুটি অনুচর- নন্দী এবং ভৃঙ্গী। এরা কিসের প্রতিক? নন্দী শব্দের উৎপত্তি নন্দ ধাতু থেকে মানে আনন্দ আর ভৃঙ্গী এসেছে ভৃ-ধাতু থেকে মানে ভরণ, পোষণ ও ধারণ করা। আর এটা তো স্বাভাবিক যে মঙ্গল যাবে সেখানে তার প্রিয় অনুচর আনন্দ, ভরণ, পোষণ ও ধারণ সেখানে চলে যাবে।নন্দীর আগমনের সাথে সাথে পাই প্রেরণা অর্থ্যাৎ মানুষের মধ্যে বেড়ে ওঠা সহ্য, ধৈর্য্য ও অধ্যবসায়ের গুণরাজি।অপরপক্ষে ভৃঙ্গী হল কারক। সংসারে-সমাজে চলতে হলে মানুষের এইসব ব্যাক্তিত্ব থাকা একান্ত প্রয়োজন নইলে তার কপালে সাফল্য জুটবে না।

শিব কেনো যোগেশ্বর?

সর্বযোগের অধিপতি মহাদেব, তাই তার আরেক নাম যোগীশ্বর বা যোগেশ্বর।সকল বোধ দর্শন ও জ্ঞানতার অধিগত। সেইজন্য তার অপর নাম পশুপতি অর্থ্যাৎ জ্ঞান ও দর্শনের অধিপতি। পশু বলতে আমরা সাধারণত বুঝি জন্তু বা ইতর প্রাণী কিন্তু পশু শব্দের একটি ব্যুৎপত্তি আছে দর্শনার্থক পশ-ধাতু থেকে অর্থ্যাৎ সবিশেষ-ভাবে যিনি সব কিছু দর্শন ও বোধ করতে পারেন তিনিই পশু। সেইজন্য শিবের পশুপতি নামের মধ্যেকার পশুশব্দটি সাধারণ চলিত অর্থে নয় বরং প্রজ্ঞাবান বাক্তিত্বের বিশিষ্ট অর্থে প্রযুক্ত।
‪‎শিবপূজার‬ বেলপাতা অপরিহার্য্য কেনো?

কারণ বেলগাছের পত্র সুমিস্ট গন্ধ ও ভেষজগুণা বলীযুক্ত। প্রাচীনকাল থেকে আর্যরা আয়ুর্বেদে বেলপাতার ব্যবহার করে আসছে এমন কি চরক, সুশ্রুতের গ্রন্থে বেলপাতার ব্যাবহার উল্লেখ আছে। তাই প্রাচীনত্ব, সুমিস্ট গন্ধ ও ভেষজগুণা বলীযুক্ত এই বৈশিষ্ট্যের জন্য বেলপাতা গুরুত্বপূর্ণ।

শিব কেনো বৈদ্যনাথ?

সুস্থদেহ ও মন নিয়ে কিভাবে সপরিবেশ বেঁচে থাকা যায়, সে-চলার কৌশল শিবের অধিগত। তাই তার অপর নাম বৈদ্যনাথ। বৈদ্য তিনিই যিনি বিদ্যমানতার মরকোচগুলি জানেন যা জীবনকে অসুস্থ করে তোলে, তার কারণ অপসারণ করে জীবনকে সুস্থ ও সুস্থ করে তোলে তাকে বৈদ্য বলে। মঙ্গলময় শিবের মধ্যে বৈদ্যনাথত্ব স্বতঃ উৎসারিত থাকে।

Bhakti Marg

 NO.5         .রথারুঢ় শ্রীজগন্নাথকে দর্শন করলে আত্মতত্ত্ব লাভ হয়! রথ হল আমাদের দেহ! জগন্নাথের রথ ২০৬টি কাঠ দিয়ে তৈরী, যা মানবদেহের ২০৬টি হাড়ের অনুরূপ! রথের ১৬টি চাকা; ৫টি জ্ঞানেন্দ্রিয়, ৫টি কর্মেন্দ্রিয় ও ষড়রিপুর প্রতীক! রথের রশি হল মন ও বুদ্ধি এর সারথি! এই দেহরূপ রথের রথী স্বয়ং ঈশ্বর! ঈশ্বর নিজের ইচ্ছায় এই শরীরকে চালিত করেন! (ঈশ্বর সর্ব্বভূতানি হৃদ্দেশেঽর্জুন তিষ্ঠতি! ভ্রাময়ন সর্ব্বভূতানি যন্ত্রারুঢ়ানি মায়ায়া!!) মানুষের ইচ্ছায় কিছু হয় না, সব ঈশ্বরের ইচ্ছায় হয়! উল্টোরথের পর জগন্নাথ রথ থেকে একবার নেমে গেলে ঐ রথে আর ওঠেন না! তখন ঐ রথ ভেঙে কাঠ সব পুড়িয়ে রান্নার কাজে লাগানো হয়! আমাদের শরীর থেকে যদি ঈশ্বর বেরিয়ে যান তবে ঐ শরীরের আর গুরুত্ব থাকে না, মৃত বলে ঐ দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়! সবকিছুর আধার সেই ঈশ্বরকে পেলে আর কিছু পাওয়ার বাকি থাকেনা! জগতের নাথ মহাপ্রভু শ্রীজগন্নাথ সকলের মঙ্গল করুন! শুভ রথযাত্রা! জয় জগন্নাথ জয় বলভদ্র জয় সুভদ্রা দেবী কী জয়!

 NO.6     

    কোনও মহাপুরুষের জীবনী যখনই লেখা হয় তখন খুঁজে খুঁজে বের করা হয়, তাঁর জীবন ঘিরে কী কী অলৌকিক ঘটনা আছে! যত বেশি অলৌকিক ঘটনা ততই তিনি      বিরাট মহাপুরুষ।
যাঁরা সাধনভজন করেন তাঁদের একটি মাত্র উদ্দেশ্য ঈশ্বর লাভ। এই ঈশ্বর কোথায় আছেন? আত্মস্বরূপকেই বলা হয় ভগবান‌‌। সব মানুষের মধ্যেই তিনি আছেন। এটিকে প্রত্যক্ষ করার চেষ্টাকেই বলা হয় সাধনা বা তপস্যা। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম প্রধান শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত ঠাকুরের দেহবসানের পর রঙমহল থিয়েটারটি ভাড়া নিয়ে পরপর কয়েকটি ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি বলতেন, অলৌকিক ঘটনা না থাকলে কোনও সাধককে অবতার বলা যায় না, তিনি খুঁজে খুঁজে — সম্ভব-অসম্ভব অনেক অলৌকিক ক্রিয়াকলাপ ঠাকুরের জীবন ঘিরে ঘটেছিল, সেই কথাই তাঁর ভাষণে প্রকাশ করেছিলেন।
বিরূপ সমালোচনা হয়েছিল, কারণ যুক্তিবাদী আধুনিক মানুষের ঈশ্বর দর্শন সম্পর্কে ধারণা অন্যরকম। স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ সিদ্ধাই-এর বিরোধী ছিলেন। জাদুবিদ্যা দেখানোর নামই সিদ্ধমহাপুরুষের সংজ্ঞা তা কিন্তু নয়!

দুশো আশি বছরের এক সুদীর্ঘ সুন্দর জীবন, না, জীবন নয়। অদ্ভুত এক মহাপুরুষের মহা অলৌকিক মহাজীবন। সেই মহাপুরুষ তাঁর অদ্ভুত মহাজীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছিলেন মা গঙ্গাকে। ঠিক যেন মাতা-পুত্রের অচ্ছেদ্য বন্ধন। জীবনের প্রতিটি ভাঁজে, প্রতিটি খাঁজে তিনি গ্রহণ করেছিলেন মা গঙ্গাকে। অর্ধ অঙ্গ থাকবে জলে অর্থ অঙ্গ স্থলে — তা কিন্তু নয়। চিত্রটা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। মায়ের বুকে, মায়ের কোলেই তিনি কাটাতেন দিনের বেশিরভাগ সময়। সেই সময়কার বহু সৌভাগ্যবান মানুষ এই অলৌকিক ঘটনা দেখে ধন্য হয়েছিলেন। হঠাৎই তিনি নেমে গেলেন গঙ্গাবক্ষে। শুরু হল জলকেলি। কখনো চিৎ সাঁতারে ভেসে বেড়াচ্ছেন এদিক থেকে ওদিক। আবার নিমেষের মধ্যে তিনি অদৃশ্য। তিনি তখন ডুব দিয়েছেন মায়ের শীতল বক্ষে। বাবা! কিন্তু সে যে মহাপুরুষের মহা ডুব। দীর্ঘ সময় বাদে তিনি উঠে এলেন জলের উপর। কিন্তু এতক্ষণ তিনি কীভাবে কোথায় ছিলেন!

কাশীর চলমান শিব, মহাযোগেশ্বর বাবা ত্রৈলঙ্গস্বামীজির বিশাল বিরাট জীবনের কিছু কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র‌।

সপ্তদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে অন্ধ্রদেশের  ভিজিয়ানা গ্রামে নরসিংহ রাও ( মতান্তরে নরসিংহ ধর ) নামে এক ভূম্যাধিকারীর ঔরসে  এবং বিদ্যাবতীর গর্ভে ত্রৈলঙ্গ স্বামী জন্মগ্রহণ  করেন। শিবের কৃপায় জন্ম বলে নবজাতকের  নাম রাখা হল শিবরাম। শিবরাম ছেলেবেলায়  গম্ভীর, শান্ত ও উদাসীন প্রকৃতির ছিলেন। পিতামাতার মৃত্যুর পর পৈত্রিক সম্পত্তি অনুজ শ্রীধরকে দিয়ে শিবরাম গ্রামের শ্মশানের এক পাশে শ্রীধরের তৈরি করে দেওয়া একটি সাধন কুটিরে টানা কুড়ি বছর অবস্থান করেন। ত্রৈলঙ্গ স্বামীর বয়স যখন ৭৮ বৎসর তখন  সহসা  সেখানে ভগীরথ স্বামী নামে এক যোগী সন্ন্যাসী আবির্ভূত হন। ত্রৈলঙ্গ স্বামী ঐ যোগীর সাথে ঐ স্থান ত্যাগ করে পুষ্কর তীর্থে এসে তাঁর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। শুরু হল যোগশিক্ষা।
ভগীরথানন্দ বা ভগীরথ স্বামীর কাছে দীক্ষাগ্রহণের পর শিবরাম বা ত্রৈলঙ্গধরের সন্ন্যাসনাম হল স্বামী গজানন্দ সরস্বতী বা গণপতি সরস্বতী।
“গণপতি সরস্বতীর জন্ম যেহেতু অন্ধপ্রদেশে, তাঁদের মাতৃভাষা তেলেগু। তাই তিনি জনসমাজে পরবর্তীকালে ত্রৈলঙ্গস্বামী বা তৈলঙ্গস্বামী নামেই পরিচিত হন। আবার তিনি ত্রিলিঙ্গের অতীত ভাবরাজ্যে বিচরণ করতেন বলে ত্রৈলঙ্গস্বামী নামেও অভিহিত হন।”
ত্রৈলঙ্গ স্বামী গুরুর আশ্রয়ে থেকে রাজযোগ,  হঠযোগ, লয়যোগ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার যোগ  শিক্ষা লাভ করেন। ত্রৈলঙ্গ স্বামী সমগ্র জীবন  ধরে যে কত অলৌকিক লীলা করেছেন তা বলে  শেষ করা যায় না। একবার তিনি সেতু বন্ধ রমেশ্বরের নিকটে একটি মেলায় উপস্থিত হয়ে  দেখেন, এক ব্রাহ্মণ কুমার প্রাণত্যাগ করেছেন। ত্রৈলঙ্গ স্বামী তখন তাঁর কমণ্ডলু হতে জল  ছিটিয়ে দিলে ঐ ব্রাহ্মণ কুমার প্রাণ ফিরে  পান। এছাড়াও তিনি হিমালয়ের পাদদেশে বসবাসকারী এক বালকের শবদেহে প্রাণের সঞ্চার করে ছিলেন। একবার এক জন্মবধির  কুষ্ঠ রোগীকে এবং আরেক বার এক যক্ষা  রোগীকে রোগমুক্ত করেন। এক মহিলার স্বামী সর্প দংশনে মারা গেলে তিনি ঐ মৃত ব্যক্তির  দংশিত স্থানে গঙ্গা-মৃত্তিকা লেপন করে তাকে বাঁচিয়ে তোলেন ফলে মহিলাটির বৈধব্যদশা দূর হয়। ত্রৈলঙ্গ স্বামী যখন নর্মদার তীরে বাস  করতেন তখন একদিন নর্মদার জল দুগ্ধে  পরিণত করে তা পান করেছিলেন।
যোগী-ঋষিগণ কখনও সাধারণ মানুষের মত জীবন-যাপন করেন না। ত্রৈলঙ্গ স্বামী সব সময়  উলঙ্গ হয়ে চলতেন। একবার আদালতে এক  বৃটিশ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তিনি মলত্যাগ করে  তা ভক্ষণ করেছিলেন। অথচ উপস্থিত সবাই  দেখলেন, তিনি সুগন্ধিযুক্ত সুস্বাদু খাদ্য খেয়েছেন। আসলে শৈব-যোগীরা লজ্জা, ঘৃণা ও  ভয়ের ঊর্ধে এবং তাঁরা চন্দন ও বিষ্ঠায় সমজ্ঞান  করেন। ভাল-মন্দ,  সুখ-দুঃখ, শীত-গ্রীষ্ম  প্রভৃতি কোন কিছুই যোগীদের প্রভাবিত করতে পারে  না। ত্রৈলঙ্গ স্বামী যখন অজগর বৃত্তি অবলম্বন  করতেন তখন নিজের ইচ্ছায় আহার সংগ্রহের  চেষ্টা করতেন না। তাঁকে ভক্তরা যা খেতে দিতেন  তাই তিনি তৃপ্তি ভরে খেতেন। একবার এক  একদল  দুষ্টলোক  তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য  চুনগোলা জল তাঁর সামনে তুলে ধরলেন। কিন্তু  তিনি তাতে রুষ্ট না হয়ে সব চুনগোলা জল  অবলীলায় পান করলেন। এরপর ঐ দুষ্ট লোকগুলো অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা  চায়। স্বামীজীও  তাদের ক্ষমা করে দেন। তিনি মা গঙ্গার তীরে  থাকতে পছন্দ করতেন। তিনি কখনও গঙ্গায়  ডুব দিয়ে জলের নিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে  থাকতেন ধ্যানে। কখনও জলে চিৎ হয়ে ভেসে  থাকতেন, এমনকি তাঁকে স্রোতের বিপরীতে  কোন প্রকার অঙ্গ-সঞ্চালন না করেই ভেসে  থাকতে দেখা যেত।

একদিন মণিকর্ণিকার ঘাটে ত্রৈলঙ্গস্বামীর সাথে  শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সাক্ষাৎ ঘটে। তখন ত্রৈলঙ্গস্বামী মৌনভাব অবলম্বন করে ছিলেন। তাই রামকৃষ্ণদেব তাঁকে ইশারায় জিজ্ঞাসা করে ছিলেন ঈশ্বর এক না অনেক। তখন তিনি  ইশারাতেই বুঝিয়ে দেন, সমাধিস্থ হয়ে  দেখ তো — এক, নইলে যতক্ষণ আমি, তুমি, জীব, জগৎ  ইত্যাদি নানা জ্ঞান থাকে ততক্ষণ ঈশ্বর অনেক। ত্রৈলঙ্গস্বামী হিমালয়ের মানসসরোবর, নেপাল, তিব্বত, পুস্কর, প্রয়াগ, বারাণসী সহ বিভিন্ন তীর্থ পরিব্রাজন শেষে জীবনের শেষভাগে কাশীর পঞ্চ গঙ্গার ঘাটেই অবস্থান করেছেন। ত্রৈলঙ্গস্বামী পঞ্চগঙ্গার ঘাটের নিকটস্থ বিভিন্ন স্থানে এবং মহেশ ভট্টের বাড়ীতে প্রায় আশি  বৎসর কাল বাস করেছেন। পরিশেষে  ৩০০  বৎসর বয়স অতিক্রম করার পর পৌষ মাসের  শুক্লা-একাদশীর দিন ত্রৈলঙ্গস্বামী নিজ ইচ্ছায়  মহাসমাধি যোগে ইহলীলা সংবরণ করেন শিবভূমি কাশীতে।
                                                                                                                                                         
লাহিড়ী মহাশয়ের এক বরেণ্য বন্ধু ছিলেন – নাম ত্রৈলঙ্গ স্বামী। লোকে বলে তাঁর বয়স তিনশ বছরেরও বেশি। মহাযোগিদ্বয়  প্রায়ই একত্র ধ্যানে বসতেন। ত্রৈলঙ্গ স্বামী এত বেশি সুপরিচিত আর তাঁর যশ এত সুদূরবিস্তৃত ছিল যে, তাঁর অলৌকিক ঘটনার সত্যতা সম্বন্ধে কেউ কোন প্রশ্নই উত্থাপন করে না। আজকে যদি যীশুখ্রিষ্ট পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে নিউইয়র্ক শহরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলতে গিয়ে তাঁর দৈবশক্তি প্রদর্শন করতেন, তাহলে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হতো, ত্রৈলঙ্গ স্বামী বহু বৎসর পূর্বে কাশীর গলি দিয়ে হেঁটে যেতে সেই রকমই উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি ছিলেন সেইসব সিদ্ধপুরুষদিগের মধ্যে একজন,
যাঁরা ভারতবর্ষকে কালের গ্রাস হতে রক্ষা করে এসেছেন।
অনেক সময় ত্রৈলঙ্গ স্বামীকে দেখা যেত —- কালকূট তিনি পান করেছেন, তবু তাতে তাঁর কোনই কুফল হয় নি। হাজার হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে জনকতক এখনও বেঁচে — তাঁরা গঙ্গার জলের উপর ত্রৈলঙ্গ স্বামীকে ভাসতে দেখেছেন। দিনের পর দিন তিনি জলের উপর বসে থাকতেন অথবা জলের তলায় বহুক্ষণ ধরে লুকিয়ে পড়ে থাকতেন।
কাশীর মণিকর্ণিকা ঘাটে প্রচণ্ড সূর্যকিরণে উত্তপ্ত প্রস্তরখণ্ডের উপর ত্রৈলঙ্গ স্বামী নিস্পন্দভাবে পড়ে রয়েছেন — এ অতি সাধারণ দৃশ্য ছিল।
এই সকল অলৌকিক ক্রিয়াকলাপে তিনি মানুষকে এই শিক্ষাই দিতে চেয়েছেন যে, যোগীর জীবন শুধু অক্সিজেন অথবা কতকগুলি অবস্থাবিশেষ বা কোনপ্রকার সাবধানতার উপর নির্ভর করে না।
জলের উপরেই হোক আর জলের নিচেই হোক, কিম্বা উত্তপ্ত প্রস্তরখণ্ডের উপর তাঁর নিস্পন্দ উলঙ্গদেহ পড়েই থাকুক — ত্রৈলঙ্গস্বামী প্রমাণ করেছিলেন যে, তিনি ঈশ্বরচৈতন্যের মধ্যেই সঞ্জীবিত ; মৃত্যু তাঁকে স্পর্শও করতে পারে না। যোগিবর যে শুধু আধ্যাত্মিকতাতেই বিরাট ছিলেন তা নয়, তাঁর দেহটিও ছিল বিপুল। দেহের ওজন ছিল তিনশত পাউণ্ড অর্থাৎ আয়ুর প্রত্যেকটি বছরের দরুন এক পাউণ্ড হিসাবে আর কি! আহার করতেন ক্বচিৎ কদাচিৎ; কাজেই দেহ কেমন করে যে এরূপ বিশাল হল, তা বাস্তবিকই রহস্যজনক। সিদ্ধযোগীরা স্বাস্থ্যের সাধারণ নিয়মকানুন সব উপেক্ষা করে চলতে পারেন, যদি কোন বিশেষ কারণে তা করার দরকার হয়। ঐ কারণ অতি সূক্ষ্ম, অতি গূঢ়, কেবল তিনি নিজেই জানেন। বড় বড় সাধুসন্তরা, যাঁদের মায়াস্বপ্ন টুটে গেছে আর এই বিশ্বজগতকে ঈশ্বরের মনের একটা পরিকল্পনা বলেই বোধ করেছে, তাঁরা শরীরকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তাঁরা জানেন যে, দেহ আর কিছুই নয়, ঘনীভূত বা হিমায়িত শক্তির একটা কার্যসাধক আকার আর কি। যদিও পদার্থবিজ্ঞানীরা আজকাল বুঝতে আরম্ভ করেছেন যে, জড় পদার্থ আসলে ঘনীভূত শক্তি মাত্র, পূর্ণজ্ঞানী যোগীরা কিন্তু জড়বস্তু নিয়ন্ত্রণ ব্যাপারে বহুদিন আগেই তত্ত্ব থেকে ব্যবহারের পারদর্শিতায় পৌঁচেছেন। ত্রৈলঙ্গ স্বামী সর্বদাই সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় থাকতেন, আর কাশীর পুলিশকেও তাঁকে নিয়ে দারুণ বিব্রত থাকতে হত। দিগম্বর স্বামীজী স্বর্গোদ্যানে আদি নর আদমের মত তাঁর উলঙ্গ অবস্থা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন। পুলিশ কিন্তু এবিষয়ে অত্যন্ত সচেতন ছিল। একদিন তারা তাঁকে জেলেই পুরে দিল। চারধারে গোলমাল শুরু হল। কিছুক্ষণ বাদেই দেখা গেল — বিরাটবপু ত্রৈলঙ্গ স্বামী কারাগারের ছাতের উপর পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন। তাঁর কুঠুরিতে তখনও মজবুত তালাচাবি ঝুলছে। কি করে যে বেরলেন, তা কেউই বলতে পারে না।
হতাশ হয়ে গিয়ে পুলিশের লোকেরা আবার তাঁকে জেল কুঠুরিতে ঢোকাল, এবং দরজার কাছে একজন প্রহরীও রাখা হল।
কিন্তু হলে কি হবে? দৈবশক্তির কাছে আইন আবার হেরে গেল। আবার দেখা গেল, ত্রৈলঙ্গ স্বামী পরম ঔদাসীন্যে এর ছাতের উপর পদচারণ করে বেড়াচ্ছেন —- কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। বিচারের দেবতা অন্ধ ; বিভ্রান্ত পুলিশের লোকেরা তাঁকেই অনুসরণ করতে চাইল। ত্রৈলঙ্গ স্বামী সর্বদা মৌনব্রত অবলম্বন করে থাকতেন।
তাঁর সুডৌলমুখ আর বিরাট পিপার মত উদর  থাকা সত্বেও, স্বামীজি কদাচিৎ আহার করতেন।
হয়ত কয়েক সপ্তাহ ধরে উপবাসে কাটাবার পর তাঁর ভক্তদের আনা কিছু ঘোল খেয়ে তিনি উপবাস ভঙ্গ করতেন। জনৈক অবিশ্বাসী ব্যক্তি একবার মনে করল যে ত্রৈলঙ্গ স্বামীকে একটা ভণ্ড বা বুজরুক বলে প্রমাণ করে দেবে। একটা বড় বালতিতে করে একবালতি কলিচূণগোলা এনে স্বামীজীর সামনে রেখে কপট ভক্তিসহকারে নিবেদন করল, “প্রভু, আপনার জন্যে এই একটু ঘোল এনেছি, দয়া করে পান করুন। ” ত্রৈলঙ্গ স্বামী কিছুমাত্র ইতস্ততঃ না করেই অবিচলিতভাবে শেষ বিন্দুটি পর্যন্ত তা পান করে ফেললেন। মিনিট কয়েকের মধ্যে সেই দুষ্টলোকটি মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় গড়াগড়ি দিতে লাগল আর চেঁচাতে লাগল, “বাঁচান, স্বামীজি বাঁচান ! আগুনে জ্বলে গেলাম, জ্বলে গেলাম। ভেতরে সব জ্বলে পুড়ে খাক্ হয়ে যাচ্ছে ; এ দুষ্টু পরীক্ষা করে বড় অন্যায় করেছি, মাপ করুন, স্বামীজি, এবারকার মতো মাপ করুন।” ত্রৈলঙ্গ স্বামী তাঁর মৌনব্রত ভঙ্গ করে তখন বললেন,
“ঠাট্টা করতে এসেছ, বোঝনি তো যে, যখন তুমি আমায় বিষ খেতে দিলে তখন তোমার জীবন আর আমার জীবন একসঙ্গে বাঁধা হয়ে গেল। দেখ, যদি না আমার এ জ্ঞানটুকু থাকত যে, যেমন সৃষ্টির প্রতি অণুপরমাণুতে ঈশ্বর আছেন তেমনি আমার উদরের মধ্যেও আছেন, তাহলে এ চূণগোলা জল তো আমায় একেবারে সাবাড় করে দিত। এখন তো ভগবানের সূক্ষ্মবিচারের সম্বন্ধে তোমার কিছু ধারনা হল, আবার যেন অন্য কারোর সঙ্গে কোনরকম চালাকি করতে যেও না।
“ত্রৈলঙ্গ স্বামীর সদুপদেশে চৈতন্যোৎপাদন হতে লোকটা আস্তে আস্তে চুপি চুপি সরে পড়ল। এই যে যন্ত্রণাভোগের স্থানপরিবর্তন, এটা স্বামীজীর কোন প্রকার ইচ্ছাপ্রসূত যে তা নয়; এ হচ্ছে ভগবানের অমোঘ বিচার, যাতে করে সৃষ্টির সুদূরতম গ্রহও পরিচালিত হয়। ত্রৈলঙ্গ স্বামী মত যাঁদের ব্রক্ষজ্ঞানলাভ হয়েছে তাঁদের জন্য ঈশ্বরের অমোঘ বিধি অবিলম্বে কার্যে পরিণত হয়। তাঁরা তাঁদের সাধনপথের প্রতিবন্ধক যে অহংভাব, তা বহুদিন আগেই দূর করতে পেরেছেন। এই যে স্বয়ংক্রিয় ন্যায়ের বিধান, তার প্রতিফলন কোন্ ধার দিয়ে আর কিভাবে যে আসে তা কেউ বলতে পারে না, ( যেমন এই ত্রৈলঙ্গ স্বামী আর তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টাকারী সেই দুষ্টু লোকটার বেলা ঘটল ); তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারলে মানুষের অন্যায় অবিচারের প্রতি আমাদের তাৎক্ষণিক ক্রোধের কিছুটা উপশম হয় বই কি ! যীশুখ্রিষ্ট বলেছিলেন, “প্রতিশোধ লওয়া আমারই কাজ; আমি প্রতিফল দেব”।
মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষমতা আর সামান্য উপায়ের আর প্রয়োজন কিসের?
জগৎসংসারই ঠিক এর হিসেবনিকেশ করে তার নিশ্চয় প্রতিফল দেবে। অজ্ঞানীমনে ভগবানের বিচার,  প্রেম, সর্বদর্শিতা, অমরত্ব – এ সবের সম্ভাবনার কথা অবজ্ঞা করেই উড়িয়ে দেওয়া হয় —- “মনে হয়, শাস্ত্রের ও সব ফাঁকা আওয়াজ, অমূলক কল্পনা।”
এই রকম অবিবেচকের মত যাদের ধারণা, এতবড় বিশ্বপ্রকৃতির বিরাট ব্যাপারেও যাদের মনে কোন ভয়ের সঞ্চার করে না, তাদের জীবন ঘটনা পরস্পরায় এমন একটি বিপরীত ঘটনার সৃষ্টি করে যে, তাতে করে তাদের শেষপর্যন্ত জ্ঞানান্বেষণে বাধ্য করে।
জেরুসালেমে যিশুখ্রিস্টের বিজয় অভিযানের সময় ভগবৎবিধির সর্বশক্তিমত্তার বিষয় তিনি উল্লেখ করেছেন।
তার শিষ্যবর্গ আর বিরাট জনতা যখন আনন্দে চিৎকার করে বলেছিল, “স্বর্গে শান্তি প্রতিষ্ঠিত, ভগবানের মহিমা অপার,” কয়েকজন ফ্যারিসী তখন একে অগৌরবের দৃশ্য বলে প্রতিবাদ করল। তারা আপত্তি করে বলল, “প্রভু, আপনার শিষ্যদের তিরস্কার করুন।”
যীশুখ্রিষ্ট উত্তর দিলেন —- “যদি তাঁর শিষ্যদের চুপ করান হয়, তাহলে “পাথরেরা তক্ষুণি চিৎকার করে উঠবে।”
ফ্যারিসীদের প্রতি এইরূপ তিরস্কারে যীশুখ্রিষ্ট এটাই দেখাতে চেয়েছিলেন যে, ভগবানের বিচার কোন রূপক কল্পনামাত্র নয়; আর শান্তস্বভাবের লোক, যদি তার জিভ উপড়েও ফেলা যায়, তাহলেও সে এই বিশ্ববিধানের মূল, সৃষ্টির আদিশক্তি থেকে সে তার বাক্ শক্তি আর আত্মরক্ষার শক্তি ফিরে পাবে — কেউ তা রুখতে পারবে না।
যীশুখ্রিষ্ট বলতে লাগলেন, “ভগবৎপরায়ণ লোকদের তোমরা চুপ করিয়ে দিতে চাও? তাহলে তোমরা তো ঈশ্বরের কণ্ঠরোধও করতে পার — যাঁর মহিমা, যাঁর সর্বব্যাপিত্ব, এমনকি প্রস্তর পর্যন্ত কীর্তন করে চলেছে। তোমরা কি চাও যে স্বর্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্বন্ধে লোকে একত্রিত হয়ে উৎসব করবে না? আর লক্ষ লক্ষ লোক মিলে তারা কেবল পৃথিবীতে যুদ্ধের সময় একত্রিত হোক — এই পরামর্শ দেবে? তাহলে ওহে ফ্যারিসীগণ, তোমরা পৃথিবীর ভিতটাকেই উল্টে ফেলার জন্যে যাবতীয় আয়োজন কর। কারন কি জান? এই সব সাধুস্বভাব লোকেরাই শুধু নয়, তাঁর এই সৃষ্টির মধ্যে দৈব সঙ্গতির সাক্ষীস্বরূপ প্রস্তর, মৃত্তিকা, জল, বায়ু, অগ্নি — সবই তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। “যোগিশ্রেষ্ঠ ত্রৈলঙ্গ স্বামীর অসীম কৃপা একবার আমার সেজমামার উপর বর্ষিত হয়েছিল। সেজমামা একদিন দেখলেন যে স্বামীজি ভক্তপরিবেষ্টিত হয়ে কাশীর গঙ্গার ঘাটে বসে আছেন। তিনি কোন রকমে পাশ কাটিয়ে ত্রৈলঙ্গ স্বামীর পদপ্রান্তে উপস্থিত হয়ে, ভক্তিভরে পাদস্পর্শ করে প্রণাম করলেন। প্রণাম করে উঠতেই দেখলেন যে, তাঁর বহুদিনের এক পুরাতন ব্যাধি একদম সেরে গেছে !
“( ত্রৈলঙ্গ স্বামী এবং অন্যান্য মহাপুরুষগণের জীবনকথা যীশুখ্রিস্টের এই বাণীটিকে স্মরণ করায়, “বিশ্বাসীরাই এই সব নিদর্শন দেখতে পাবে; আমার নামে (অর্থাৎ ক্রিস্টচৈতন্য লাভ হলে) তারা শয়তানকে দূর করতে পারবে; তাদের মুখে আসবে নূতন বাণী; তারা সর্পকে জয় করতে পারবে। আর তারা যদি কোন কলকূটও পান করে, তাহলে ঐ কলকূটও তাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না।
তারা ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তির উপর হস্তস্পর্শ করলেই তারা আরোগ্যলাভ করবে।”)
জানা গেছে যে, ত্রৈলঙ্গ স্বামীর এখন একমাত্র জীবিতা শিষ্যা হচ্ছেন শঙ্করী মায়ী জীউ।
ইনি তাঁর এক শিষ্যের কন্যা — শৈশব থেকেই স্বামীজীর কাছে শিক্ষা পান! হিমালয়পর্বতে বদরীনাথ, কেদারনাথ, অমরনাথ, পশুপতিনাথ প্রভৃতি স্থানের বিভিন্ন গুহায় প্রায় চল্লিশ বৎসর তিনি অতিবাহিত করেন। ব্রহ্মচারিণী শঙ্করীমায়ী ১৮২৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। এখন তাঁর বয়স একশত বৎসরের উপর। চেহারায় বার্ধক্যের বিশেষ কোন লক্ষণ দেখা যায় নি। চুল কাল, দাঁতগুলো ঝকঝকে পরিষ্কার, আর আদম্য শক্তি ও উৎসাহ এখনও তাঁর বজায় আছে। এখন তিনি মেলা বা ঐ জাতীয় কোন ধর্মোৎসবের সময় মাঝে মাঝে তাঁর নির্জনবাস হতে বেরিয়ে আসেন।
শঙ্করী মায়ী জিউ লাহিড়ী মহাশয়ের কাছে প্রায়ই আসতেন। তিনি একবার বলেছিলেন যে, একদিন কলকাতার কাছে ব্যারাকপুরে যখন তিনি লাহিড়ী মহাশয়ের কাছে বসেছিলেন, তখন লাহিড়ী মহাশয়ের গুরু বাবাজী মহারাজ নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করে উভয়ের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেন।
তিনি স্মৃতি রোমন্থন করে বললেন, “অমর মহাগুরু তখন একটি ভিজে কাপড় পড়েছিলেন। মনে হল, যেন তিনি এইমাত্র নদী থেকে স্নান করে আসছেন। কতকগুলি উপদেশ দিয়ে তিনি আমায় আশীর্বাদ করেন।” বারাণসীতে কোন এক উপলক্ষ্যে একবার ত্রৈলঙ্গ স্বামী তাঁর স্বাভাবিক মৌনব্রত পরিত্যাগ করে প্রকাশ্যে লাহিড়ী মহাশয়কে মহাসমাদরে অভ্যর্থনা করেন। তাঁর এক শিষ্য এতে আপত্তি জানালেন।
শিষ্যটি বললেন, “গুরুদেব, আপনি সন্ন্যাসী, সংসার ত্যাগ করেছেন ; আপনি কেন একজন গৃহীকে এ রকম সম্মান দেখাবেন?”
ত্রৈলঙ্গ স্বামী তাকে বললেন, “বেটা, লাহিড়ী মহাশয় হচ্ছেন মায়ের আদুরে ছেলে ; মা তাঁকে যেখানে রাখবেন সেখানেই থাকবেন। সাংসারিক লোক হিসাবে কর্তব্যপালন করতে করতে তিনি সেই পূর্নব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেছেন, যা পাবার জন্যে আমি লেংটিটাও অবধি ত্যাগ করে এসেছি, বুঝলে?”
          

শিবপুরী কাশী নগরীতে নতুন এসেছেন একজন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট। যেমন তিনি রাশভারী, তেমনি তিনি শাসনকার্যে দারুণ কড়া। কাশীর মহিমা সম্পর্কে সাহেব অনেকের মুখেই অনেক কাহিনী শুনেছেন—তাই এই সুপ্রাচীন নগরী সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ খুবই বেশি।

সেদিন তিনি নগর-পরিক্রমায় বেরিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এসে হাজির হয়েছেন দশাশ্বমেধ ঘাটে। হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ল বিশালদেহী একজন নগ্ন মানুষ। সকলেই তাঁকে সচল বিশ্বনাথ বলে জানেন ও মানেন। তিনি তাঁর ইচ্ছেমত কাশীতে ঘুরে বেড়ান—ভক্তরা তাঁকে শিবজ্ঞানে প্রণাম করেন। সকলেই তাঁকে ‘ত্রৈলঙ্গস্বামী’ নামেই চেনেন। কিন্তু এই নতুন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট তো তাঁকে চেনেন না। তিনি এই উলঙ্গ সন্ন্যাসীকে দেখে রীতিমত ক্রুদ্ধ হলেন। তাঁর রাজত্বে এমন অশিষ্ট অনাচার তিনি কিভাবে সহ্য করেন?
রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে সেই ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দিলেন, ‘এই অসভ্য লোকটাকে এখনই গ্রেপ্তার করে ফটকে পুরে দাও।’ যেমন আদেশ তেমন কাজ। সন্ন্যাসীকে তখনই ধরে এনে হাজতে বন্দি করে রাখা হল। কাশীর অনেক গণ্যমান্য মানুষ বিভ্রান্ত ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝালেন, ‘সাহেব, এমন কর্ম করবেন না। ইনিই সাক্ষাৎ শিব।’ কিন্তু ক্ষমতাগর্বী ইংরেজ শাসক এসব অনুরোধ বিন্দুমাত্রও কর্ণপাত করলেন না।

পরদিন ভোরবেলা এই অদ্ভুত মানুষটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে হাজির হলেন হাজতের সামনে। সেখানে গিয়ে তো তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। এমন দৃশ্য দেখা তো দূরের কথা, তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। তিনি দেখলেন হাজতে বন্দি সেই বিস্ময়কর মানুষ আর হাজতের ভিতরে নেই। তিনি ততক্ষণে হাজতের বাইরে বেরিয়ে এসে বারান্দায় এতটাই নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন—যেন তাঁর কিছুই হয়নি। ম্যাজিস্ট্রেট একবার হাজতের দিকে তাকালেন, দেখলেন হাজতের দরজায় ইয়া বড় বড় দুটো তালা যথারীতি ঝুলছে—প্রহরীরাও যথারীতি পাহারা দিয়ে চলেছে। তবে এটা কেমন করে ঘটল ? ম্যাজিস্ট্রেট বিস্তর ভাবনা-চিন্তা করেও কোনও কুলকিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রথমেই রক্তচক্ষু হয়ে তিনি প্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, কিন্তু কেউই কিছু বলতে পারলেন না। সকলের কাছেই এটা এক অলৌকিক ঘটনা। ওসব কথা বিশ্বাস না করে ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই লোহার দরজা, হাজতের দেওয়াল, দরজা বন্ধ-তালা ও তার চাবি ইত্যাদি ব্যাপারে বারবার তন্নতন্ন করে অনুসন্ধান করলেন। কিন্তু বহু কসরৎ করেও কোনও কিছুই হদিশ করতে পারলেন না।
তাহলে এই রহস্যময় কয়েদি হাজতের বাইরে এলেন কিভাবে? ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটের যুক্তি-বুদ্ধি সব যেন কেমন গুলিয়ে গেল। এবার তিনি গিয়ে দাঁড়ালেন ত্রৈলঙ্গস্বামীর মুখোমুখি, গম্ভীরস্বরে প্রশ্ন করলেন—যোগী, আমাকে কাছে কিছু গোপন করার চেষ্টা করো না—সত্যি কথা বলো কী করে তুমি হাজতের বাইরে এলে?
এক রহস্যময় হাসিতে ত্রৈলঙ্গস্বামী উদ্ভাসিত হয়ে উঠলেন, সহজ সরলভাবে বললেন সারারাত ওই লোহার ঘরেই ছিলাম, কিন্তু সকালে আমার একটু বাইরে আসার ইচ্ছে হল—আর ইচ্ছে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম— কোনও বাধা কোথাও পেলাম না।

এসব কথা ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বাস করলেন না। তিনি মনে মনে স্থির-নিশ্চয় হলেন যে, রক্ষীদের যোগসাজসেই এই যোগী বন্ধ হাজতের বাইরে চলে এসেছিল। তাই এবার আর তিনি কোনও ঝুঁকি নিলেন না। ত্রৈলঙ্গস্বামীকে আবার হাজতে ঢুকিয়ে দিলেন এবং নিজের হাতে হাজতের লৌহ-কপাটে একটার জায়গায় দুটো তালা ঝুলিয়ে দিলেন। শুধু তাই নয়, হাজতের চাবি জোড়া রেখে দিলেন নিজের কাছে। তারপর যথারীতি চলে গেলেন নিজের এজলাসে।

একটু পরেই ঘটল এক অদ্ভুতকাণ্ড। এজলাসে নিজের আসনে বসে ম্যাজিস্ট্রেট বিস্ফারিত নয়নে দেখলেন, এবার আর হাজতের বাইরে নয়, তাঁরই আদালত কক্ষের এককোণে দাঁড়িয়ে আছেন বিশালদেহী উলঙ্গ সন্ন্যাসী। ইংরেজ সাহেব নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না— ভাবছেন, এটা কী করে সম্ভব হল। পকেটে হাত দিয়ে দেখলেন, হাজতের চাবি যথাস্থানেই আছে। এ যে একেবারেই অবিশ্বাস্য ঘটনা। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের যখন দিশেহারা অবস্থা, ওদিকে ত্রৈলঙ্গস্বামীর চোখে-মুখে তখন দুষ্টুমিভরা হাসি।

মহাযোগী ত্রৈলঙ্গস্বামী এবার ধীর পদক্ষেপে সাহেবের সামনে এসে দাঁড়ালেন, শান্তস্বরে বললেন, “সাহেব, তুমি অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই শুধু জড় ও জড়ের শক্তিই বোঝ। এই বিশ্ব সংসারের মধ্যেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এক মহাচৈতন্যলোক—তার খবর তোমার মোটেই জানা নেই। সেই চৈতন্যলোকের সঙ্গে যাঁর যোগাযোগ সাধিত হয়েছে, কোনও বন্ধনই তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অসীমকে কি সীমায় বাঁধা যায়?

একদিন উজ্জয়িনীর রাজা গঙ্গায় নৌকা ভ্রমণ করছিলেন। তিনি ত্রৈলঙ্গ স্বামীকে গঙ্গায় ভাসতে দেখে নৌকায় তুলেন। রাজার নিকট একটি সুন্দর তরবারি ছিল। স্বামীজি রাজার নিকট দেখি দেখি বলে তরবারিটি চাইলেন। রাজা তরবারিটি স্বামীজির হাতে দিলে তিনি প্রশ্ন করলেন এটি কি। রাজা তাঁকে বললেন এটি রাজ পরিবারের গর্ভের বহুমূল্যবান তরবারি। ইংরেজ সরকার বীরত্বে খুশি হয়ে স্বীকৃতিস্বরূপ এই তরবারিটি দিয়েছে।  ত্রৈলঙ্গস্বামী কিছু বুঝার আগেই তরবারিটি খাপ থেকে বাহির করে গঙ্গায় ফেলে দিলেন। দৃশ্যটি দেখে রাজা খুব রাগান্বিত হলেন এবং তার মন খুব খারাপ হয়ে গেল। ত্রৈলঙ্গ স্বামী গঙ্গায় ডান হাত  ডোবালেন এবং একই রকমের দুইটি তরবারি তুলে আনেন। রাজাকে বলেন নে তোর কোনটি বেছে নে। রাজা এ দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যান। দুটি তরবারি একই রকমের। রাজা নিজের কোনটি তা বেছে নিতে পারলেন না। স্বামীজি তখন রাজার তরবারিটি রাজাকে দিলেন এবং অন্যটি গঙ্গায় ফেলে দিলেন। তিনি রাজাকে তিরষ্কার করে বলেন মূর্খ। তুমি নিজের জিনিস বলে যা দাবী করছ তা নিজেই চিনে নিতে পারলে না?  তোমার ভেতরটা শুধু মোহ, দম্ভ আর অজ্ঞানে ভরাট রয়েছে। একক্ষণে মহারাজার চৈতন্য ফিরল। তিনি আর কালক্ষেপ না করে স্বামীজির চরণদুটি দু-হাতে চেপে ধরলেন। তিনি তখন অনুতপ্ত। স্বামীজির কাছে বারংবার ক্ষমা চাইতে লাগলেন। স্বামীজি তাঁকে আর্শীবাদ করে চলে গেলেন নিজের গন্তব্যে।

বিজয়কৃষ্ণ গােস্বামী তাঁর জীবনীগ্রন্থে লিখছেন, আমি তখন ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজে ছিলাম। তখন একবার কাশীধামের বিখ্যাত ত্রৈলঙ্গ স্বামীজির সহিত আমার সাক্ষাত হয়।
‘আমি প্রাতে উঠিয়া বাহির হইতাম এবং প্রায়ই ত্রৈলঙ্গ স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে থাকিতাম, কোন কোন দিন একটু বেলা হইলে, স্বামীজি ইঙ্গিতে আমার ক্ষুধা লাগিয়াছে কিনা জিজ্ঞাসা করিতেন। ক্ষুধা লাগিয়াছে বলিলে, রাস্তাতে সুবিধামত কাহাকেও বলিতেন, — ‘উহার জন্য কিছু খাবার আন।
অমনি তাহারা ৫/৭ জনের খাবার নিয়া আসিত। আমি বলিতাম, ‘এত খাইতে পারিব না, আপনি খাবেন কি?’ তাহাতে তিনি স্বীকৃত হইয়া তাঁহার মুখের ভিতর খাবার দেওয়ার জন্য বলিতেন।
স্বামীজি খুব খাইতে পারিতেন। খাইতে খাইতে যখন প্রায় সমস্তই নিঃশেষ হইবার উপক্রম হইত তখন আমি নিজের অংশ উহার ভিতর হইতে সরাইয়া রাখিতাম এবং বলিতাম —- ‘আমারটা ত আমি আগে রাখিয়া দেই।’ ইহাতে তিনি একটু হাসিয়া মাটিতে লিখিয়া দেখাইতেন— ‘বাচ্চা সাচ্চা হ্যায়।’ কোন সময়ে হয়ত স্বামীজি নদীতে পড়িয়া ভোস করিয়া ডুব দিতেন এবং মণিকর্ণিকার ঘাটে গিয়া উঠিতেন। আমি তখন গঙ্গার পার দিয়া দৌড়াইয়া যাইতাম।”
বিজয়কৃষ্ণ গোঁসাইকে স্বামীজি অত্যন্ত স্নেহ করতেন। কাশীর সচল বিশ্বনাথ তাঁর অত্যন্ত স্নেহের পাত্রটিকে একবার মারাত্মক বিপদের হাত থেকে অলৌকিকভাবে বাঁচিয়েছিলেন। ‘প্রয়াগের কুম্ভমেলায় বিজয়কৃষ্ণ গোঁসাই একদিন বিশেষ খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়েছিলেন। সেইসময় এক ‘বালক সন্ন্যাসী’ এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। ওই বালক সাধু চলে যাওয়ার পর গোঁসাইজী উপস্থিত ভক্তদেরকে বলেছিলেন, তিনি আর কেহ নহেন, স্বয়ং ত্রৈলঙ্গস্বামী বালকরূপে আসিয়া বিপদে তাঁহাকে সাহায্য করে গেলেন।

গোঁসাইজীর সহিত ত্রৈলঙ্গ স্বামীজির অদ্ভুত ও মজার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল জানা যায়। একদিন এক কালীমন্দিরে গিয়া স্বামীজি প্রস্রাব করিয়া ছিটাইয়া কালীর অঙ্গে দিতে লাগিলেন। 
আমি জিজ্ঞাসা করিলাম – ‘প্রস্রাব গায়ে দেন কেন?’ তিনি মাটিতে লিখিয়া দিলেন, — ‘গঙ্গোদকং।’ 
আমি বলিলাম — ‘কালীর গায়ে ছিটাইয়া দিলেন কেন?’ 
তিনি উত্তর দিলেন ‘পূজা’।
সে সময় ওই দেবালয়ে লােক ছিল না। পরে লােক আসিলে বলিলাম — “উনি প্রস্রাব করিয়া কালীর গায়ে ছিটাইয়া দিয়াছেন এবং বলেন যে উহা “গঙ্গোদকং বা গঙ্গাজল)”। তাঁহারা উহা শুনিয়া বলিলেন, ‘ইনি তাে সাক্ষাৎ বিশ্বেশ্বর, ইহাকে এমন বলিতে নাই, ইহার প্রস্রাব যে গঙ্গোদক, তাহা ঠিকই।’
তিনি লিখে গেছেন, একদিন স্বামীজি ও আমি দশাশ্বমেধ ঘাটের উপর দিয়া ভ্রমণ করিতেছি, এমন সময়ে তিনি আমার হাত ধরিয়া মৌনভঙ্গ করে বলিলেন, তােকে দীক্ষা দিব। আমি বলিলাম– হ্যাঁ, তােমার কাছে আবার আমি দীক্ষা নিব। তুমি কখনও শিবপূজা করাে, কখনও প্রস্রাব করিয়া কালীর গায়ে ছিটাইয়া দাও এবং বলাে যে গঙ্গোদকং, আমি তােমার নিকট হইতে দীক্ষা গ্রহণ করিব না। বিশেষত আমি ব্রহ্মজ্ঞানী, আমি এ গুরুবাদ মানি না। তিনি হাসিয়া বলিলেন,— ‘বাচ্চা সাচ্চা হ্যায়।’ পরে হিন্দি ভাষায় বলিলেন,– ‘তোকে দীক্ষা দিবার আমার বিশেষ কোনও গূঢ় কারণ আছে। রীতিমতাে দীক্ষা দিব না। গুরু গ্রহণ না করিলে শরীর শুদ্ধ হয় না, তাের গুরু আমি নই, অন্য একজন। সময়ে তাঁহার সাক্ষাৎ পাইবে। তবে আমি এখন তাের শরীর শুদ্ধ করিয়া দিব। ইহার পরে তিনি আমাকে ত্রিবিধ মন্ত্র প্রদান করিয়া বলিলেন —
‘আমার উপর ভগবানের যে আদেশ ছিল তাহাই পালন করিলাম মাত্র।’

এরপর একদিন গোঁসাইজিকে সন্ন্যাসব্রত অবলম্বন করবার জন্য কাশীধামে যেতে হয়। সেইসময় ত্রৈলঙ্গস্বামী তাঁকে বলেছিলেন, ‘কেয়া ইয়াদ হ্যায়।’ উত্তরে গোঁসাইজি হাতজোড় করে বলেছিলেন, হ্যাঁ মহারাজ।

ঋণ স্বীকার : যোগী-কথামৃত ( Autobiography of a Yogi ),      
             “ভারতের সাধক — শঙ্কর নাথ রায়।”       
    ত্রৈলঙ্গস্বামী সমগ্ৰ : লেখক : অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়।

                         ভারতের সাধক ও সাধিকা 
                               পুণঃপ্রচারে বিনীত
                                      প্রণয় সেন

  NO.7  ;  সনাতন ধর্মে আলোকে বিজ্ঞান

সনাতন ধর্ম যা হাজার হাজার বছর আগে বলে গেছে তাই বহু চড়াই-উতরাই পার করে আজ প্রমাণিত, প্রচলিত ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত। 

♥ বিবর্তন ♥
যখন বিশ্বের লোকেরা খাওয়া আর যৌনতা ছাড়া আর কোন কাজ কল্পনাই করতে পারতো না,তখনই সনাতন হিন্দুধর্ম বিবর্তনের ব্যাখ্যা দিয়েছে।

কীট পতঙ্গ ১১লক্ষ,জলজ জীব ৯লক্ষ, গাছপালা ২০ লক্ষ, পাখী ১০ লক্ষ,পশু 30 লক্ষ,মানুষ 4 লক্ষ= ৮৪ লক্ষ বার জন্ম হয় জীবাত্মার।(পদ্মপুরাণ) 

অর্থাৎ প্রথমেই জীবাত্মার মানুষ হিসেবে জন্ম নেয় না।লক্ষ লক্ষ বার সরল এককোষী প্রাণী থেকে জন্ম নেয়ার পর ধীরে ধীরে জটিল কোষের প্রাণীতে পরিণত হয়ে পশু হয়ে জন্মানোর পর মানুষরূপে জন্ম নেয়।

বিবর্তনবাদের মতেও এককোষী সরল প্রাণী থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তনের মাধ্যমে বহুকোষী জটিল জীবের তৈরী এবং তারপর আধুনিক মানুষের সৃষ্টি। 

♥গাছের প্রাণ আছে ♥
যে সময় অন্যান্যরা গাছকে প্রাণহীন ভাবতো তখন সনাতন শাস্ত্রই গাছেকে জীব হিসেবে দাবি করেছে এবং জীবাত্মা গাছ রূপে ২০ লক্ষ বার জন্মগ্রহণ করে জানিয়েছে।

এছাড়াও পবিত্র বেদে আছে,

★इ॒दं ज॒नासो॑ वि॒दथ॑ म॒हद्ब्रह्म॑ वदिष्यति। न तत्पृ॑थि॒व्यां नो॑ दि॒वि येन॑ प्रा॒णन्ति॑ वी॒रुधः॑ ॥
ইদং জনাসো বিদথ মহদ্ব্রহ্ম বদিষ্যতি। ন তত্পৃথিব্যাং নো দিবি যেন প্রাণন্তি বিরুধঃ।।

-[অথর্ববেদ ১/৩২/১]

পদার্থ- (জনাস) হে মানব, (ইদম) এই সমগ্র সংসারের মূলকারণকে (বিদথ) জান। (মহত্) সেই মহান সত্ত্বারই (ব্রহ্ম) বেদ (বদিষ্যতি) বর্ণনা করে। (তত্) তিনি (না পৃথিব্যাম্) না কেবল পৃথিবীতে (নো দিবি) না দ্যুলোকের কোন স্থানবিশেষে, তিনি সর্বত্রই বিদ্যমান । (যেন) যার থেকে (বীরুধ) গুল্মলতা উদ্ভিদাদি (প্রাণন্তি) প্রাণকে ধারণ করে।

★सूर्यं॒ चक्षु॑र्गच्छतु॒ वात॑मा॒त्मा द्यां च॑ गच्छ पृथि॒वीं च॒ धर्म॑णा । अ॒पो वा॑ गच्छ॒ यदि॒ तत्र॑ ते हि॒तमोष॑धीषु॒ प्रति॑ तिष्ठा॒ शरी॑रैः ॥
সূর্য চক্ষুর্গচ্ছতু বাতমাত্মা দ্যাং চ গচ্ছ পৃথিবীং ধর্মণা। অপো বা গচ্ছ যদি তত্র তে হিতমোষধীষু প্রতি তিষ্ঠা শরীরৈঃ।।

-[ঋগ্বেদ ১০/১৬/৩]

পদার্থ - হে মানব, মৃত্যুর পর তোমার (চক্ষুঃ) চক্ষু (সুর্যম্) সুর্যকে (আত্মা) এবং আত্মা (বাতম্) প্রাণবায়ুকে (গচ্ছতু) প্রাপ্ত হয়। (ধর্মণা) কৃত কর্ম অনুসারে তোমার আত্মা (দ্যাম চ) আকাশ এবং (পৃথিবীম্ চ) পৃথিবীলোককে (গচ্ছ) প্রাপ্ত হয়। (শরীরৈঃ) শরীর ধারণ করে (অপ বা) জলজ স্থানকেও (গচ্ছ) প্রাপ্ত হয় কিংবা (ঔষধীষু) ঔষধি ও বৃক্ষ আদিতে (প্রতি তিষ্ঠ) স্থিতি লাভ করে (যদি) যদি (তত্র) সেখানেই (তে) তোমার (হিতম্) হিত হয়ে থাকে।
পরে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু তা প্রমাণও করে গেছেন।

♥জ্যোতিষশাস্ত্র♥
যখন লোকেরা চাঁদ দেখার জন্য পাহাড় বেয়ে উঠানামা করতো তখন সনাতন ধর্মের পন্ডিত, জ্যোতিষীরা ঘরে বসেই হাজার বছরের চাঁদ দেখা,অমবস্যা,পূর্ণিমার হিসাব কষতেন।এবং এখনো পঞ্জিকায় তা লিখা থাকে।

♥টেস্ট টিউব বেবি,ক্লোনিং,টিস্যু কালচার ♥
এটি প্রথম আমরা সনাতন ধর্মে পাই।

আপনারা কি কখনো ভেবেছেন মহাভারতে গান্ধারী কি ভাবে ১০১ টি সন্তান জন্ম দিতে পারে?
মহাভারতের গান্ধারী বহুকাল গর্ভাবস্থায় থাকার পর বড় একখন্ড মাংসপিণ্ড প্রসব করেন। ঋষি ব্যাস এই মাংসপিণ্ড গুলোকে ১০১ ভাগ করেন এবং প্রতিটিকে আলাদা আলাদা পাত্রে ভেষজ,ঘি,ওষধিসহ গোপন স্থানে স্থাপন করেন।তারপর সেগুলো থেকেই ২ বছর ৯ মাসে ১০০ কৌরব ও এক কন্যার জন্ম হয়।

বর্তমানে ক্লোনিং ও টেস্ট বেবিও এরকম আলাদা পাত্রে মাংসের টিস্যু থেকে জন্ম দেয়া যায়।
(যাদের এ বিষয়ে সন্দেহ, তারা আগে টেস্ট টিউব বেবি,ক্লোনিং,টিস্যু কালচার সম্পর্কে জানবেন)

♥চাঁদ সূর্যের আলোয় সূর্য আলোকিত♥
‘এরূপে আদিত্য রশ্মি এ গমনশীল চন্দ্রমণ্ডলের অন্তর্গত ত্বষ্টৃতেজ পেয়েছিল।’ এখানে ত্বষ্টৃতেজ অর্থে সুর্যালোক। অর্থাৎ সুর্যের আলোক চন্দ্রে প্রতিফলিত হলে যে চন্দ্র আলোকিত হয় এ তথ্য ঋগ্বেদের ঋষিদের অজানা ছিল না।(ঋগ্বেদ ১/৮৪/১৫)

আজ বিজ্ঞানও বলে,চাঁদের নিজস্ব আলো নেই।তা সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়।

♥সৌরবর্ষ ও চান্দ্র বর্ষ ♥
সৌর বছর ও চান্দ্র বছরের মধ্যে পার্থক্য সূচক এই ঋক্ টির (১।২৫।৮) অনুবাদ দেখুনঃ ‘যিনি ধৃতব্রত হয়ে স্ব স্ব ফলোৎপাদী দ্বাদশ মাস জানেন এবং যে ত্রয়োদশ মাস উৎপন্ন হয় তাও জানেন।’ সৌরবৎসর ৩৬৫ দিনে এবং চান্দ্রবৎসর ৩৫৫ দিনে হয় অর্থাৎ প্রতি বছরে চান্দ্র অপেক্ষা 
সৌর বছর ১০ দিন বেশী। সুতরাং প্রতি তিন বছরে চান্দ্র বছর ৩০ দিন বা ১ মাস বেশী হয়ে পড়ে অর্থাৎ ১২ মাসের বদলে ১৩ মাস হয়। এই ত্রয়োদশ মাসটিকে মলিম্লুচ বা মালমাস বলে। সুতরাং এ ঋক থেকে বোঝা যায়, বৈদিক যুগের ঋষিগণ সৌরবছর ও চান্দ্রবছরের পার্থক্য জানতেন, কেবল তাই নয় প্রতি তিন বছরে উৎপন্ন ত্রয়োদশ মাসটিকে মালমাস ধরে কেমন করে উভয় বছরের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেতে হয় তাও তাঁরা জানতেন। জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে তাঁরা গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ১।১৬৪।১২ ঋক্ থেকে সূর্যের সপ্তরশ্মি এবং উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণের উল্লেখ পাই। ছয় ঋতু, দ্বাদশ মাস, এমন কি ভূলোকের দুই অর্ধের পরিচয়ও এ ঋকে সুন্দররূপে ধরা পড়েছে।

♥সূর্য,আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি ♥

সূর্যের কারণে পৃথিবীতে দিন-রাত্রি (আািহ্নক গতি) হওয়ার বর্ণনা খুব সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে। ভাগবতের ৫ম স্কন্ধের এ বিষয়ে পূর্ণ ধারণা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সূর্যের যে কোনো উদায় বা অস্ত নেই তার ধারণা বিজ্ঞানীরেদর আবিষ্কারেরও বহু আগে বৈদিক শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
নৈবাস্তমনর্কম্য নোদয়ঃ সর্ব্বদা সতঃ।
উদয়ান্তমানাখ্যং হি দর্শনাদর্শনং রবে ॥
“সূর্য সর্বদাই বিদ্যমান থাকেন। তাঁহার প্রকৃত পক্ষে অস্তগমন বা উদয় নাই। তাঁহার দর্শন ও অদর্শনকেই উদয়ান্তরূপে কল্পনা করা হয়”।
যৈর্বত্র দৃশ্যতে ভাষড়গান সতেষামুদয়ঃ স্মৃতঃ”।
তিরো ভাবঞ্চ যত্রৈতি তত্রৈবাস্তমনং রবে।
নৈবাস্তমনমর্বস্য নোদয়ঃ সর্ব্বদা সতঃ।
উদয়াস্তমনাখ্যং হি দর্শনাদর্শনং রবেঃ।
(বিষ্ণু পুরাণম দ্বিতীয়াংশ ৮/১৪-১৫)
“পৃথিবীর যেখান হতে সূর্য দৃশ্য হন, সেখানের পক্ষে তাঁর উদয় এবং যেখান হতে তিনি দৃশ্য হন না, সেখানের পক্ষে তাঁহার অস্তমন মনে হয়। বাস্তবিকই, সূর্যের উদয় বা অস্ত নাই”।

এমন হাজারো উদাহরণ আছে। 
একটা কথা মনে রাখবেন বিজ্ঞান পরিবর্তন শীল।আজকে বিজ্ঞানের মত কাল পরিবর্তন হয়ে যাবে।কিন্তু সনাতন হিন্দু ধর্মের মত অপরিবর্তনীয় ও সত্য, আজ বিজ্ঞানের সাথে দুয়েকটা বিষয়ে না মিললেও কাল হয়তো মিলবে।তাই বলে কখনোই বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে সনাতন হিন্দুধর্ম কে নিয়ে উপহাস করবেন না।

তাই অজ্ঞানী না থেকে মূর্খ Cool dude না সেজে নিজেদেরকে আপডেট করুন।
বেদ,গীতা,উপনিষদ পড়ুন।
জ্ঞান অর্জন করুন।

জয় হোক সনাতনের
সংগৃহীত

 NO.8  ;           মা আসছে  

প্রশ্ন:-লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মাটির প্রতিমা বানিয়ে আবার সেটাকে কয়েক দিন পর জলে ভাসিয়ে দেয় কেন 

উত্তর:-‌সনাতন  ধর্মের বৃহত্তর একটা পূজা হচ্ছে দূর্গা পূজা । আর এই দূর্গা পূজার সময় হলে কিছু লোক প্রশ্ন করে যে হিন্দুরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মাটির প্রতিমা বানিয়ে আবার সেটাকে কয়েক দিন পর জলে ভাসিয়ে দেয় । এটা আবার কেমন ধর্ম । আমরা হিন্দুরা অনেকেই এই কথাগুলোর যথাযত উত্তর দিতে পারিনা । তাই আসুন এই কথাগুলোর যথাযথ উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

 ‌সনাতন ধর্ম বিশ্বাস করে, “মানুষের দেহ পাঁচটি উপাদান দিয়ে তৈরি”। যথাঃ আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মাটি। তাই মৃত্যুর পর এই দেহ আগুনে দাহ করা হয় অথবা মাটি দেওয়া হয়। যে উপাদান দিয়ে এই দেহ তৈরি, মৃত্যুর পর আবার সেই একই উপাদানে মিশে যায়।

‌ঈশ্বর সর্বত্রই বিরাজিত। প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি প্রাণীর মধ্যই তিনি আছেন। তবে, পঞ্চ উপাদানে গড়া এই মানব দেহের প্রতীকী হিসেবেই আমরা পূজার সময় প্রতিমা তৈরি করি মাটি দিয়ে। পরবর্তীতে সেই মাটির প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা করি। এই প্রতিমা পূজার সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে বিসর্জন। জলের মাধ্যমেই যেন মাটির প্রতিমা পুনরায় প্রকৃতিতে মিশে যায়, সেই জন্যই আমরা গঙ্গার জলে প্রতিমা বিসর্জন দেই।

‌আমাদের হৃদয়ে যে নিরাকার ঈশ্বর রয়েছে, উপসনার নিমিত্তে মাটির প্রতিমা তৈরি করে তাকে “সাকার রূপ” দেওয়া হয়। পূজা শেষে পুনরায় সেই “সাকার রূপ”কে বিসর্জন দিয়ে নিরাকার ঈশ্বরকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া হয়। সেই কারণেই দুর্গা পূজার সময় যখন প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় তখন মায়ের প্রতি আমাদের প্রার্থনা থাকে, “মা, তুমি আবার এসো আমাদের মাঝে। এই একটি বছর তুমি থাকবে আমাদের হৃদয়ে । আবার, বছর পরে তোমার প্রতিমা গড়ে আমরা সাড়ম্বরে তোমার পূজা করবো।

‌যে জন্ম নিয়েছে, তার মৃত্যু অনিবার্য। এটাই প্রকৃতির শাশ্বত নিয়ম। ঠিক তেমনি যাকে আবাহন করা হয়, তার বিসর্জনও অনিবার্য। বিসর্জনের মাধ্যমেই “পুনরায় আগমনের” আশা সঞ্চারিত হয়। এই সকল কারনেই আমরা প্রতি বছর হৃদয়স্থ ঈশ্বরের মাটির প্রতিমা গড়ে তাকে বাহ্যিক ভাবে পূজা করি এবং পূজা শেষে বিসর্জনের মাধ্যমে তাকে আবার হৃদয়ে স্থানাতরিত করি। এটিই প্রতিমা পূজা ও প্রতিমা বিসর্জনের মূল তাৎপর্য।

NO.9          জয় জগন্নাথ

★জগন্নাথ কে...? 
★স্নান যাত্রা কী...?? 
★কেন করা হয়...??

যেই গৌর, সেই কৃষ্ণ, সেই জগন্নাথ। 
ভগবান শ্রীজগন্নাথদেব হলেন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং যিনি জগতের নাথ বা জগদীশ্বর। সংস্কৃতি ভাষায় জগত অর্থে বিশ্ব এবং নাথ অর্থে-ঈশ্বর বোঝায়। সুতরাং জগন্নাথ শব্দের অর্থ হলো জগতের ঈশ্বর বা
জগদীশ্বর। স্কন্ধ পুরানে রথযাত্রার মহিমা বর্ননা করে বলা হয়েছে- যিনি গুন্ডিচা মন্দিরে (জগন্নাথের মাসীর
বাড়ী) ভগবানের শ্রীবিগ্রহকে দর্শন করার
সৌভাগ্য অর্জন করেন, তিনি সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করেন।জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা
২৪জুন ২০২১জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা মহোৎসব ভগবান জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথিকে
স্মরণীয় করে রাখার জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা
তিথিতে জগন্নাথ দেবের এক বিশেষ স্নান যাত্রা
অনুষ্ঠিত হয়।
স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন যখন জগন্নাথ
দেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করলেন তখন
থেকে এই স্নান যাত্রার উৎসব শুরু। স্নান যাত্রার
দিনটিকে জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি বা জন্মদিন
হিসেবে পালন করা হয়। স্নান যাত্রার আগের দিন
জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা দেবী এবং সুদর্শন
দেবকে বেদী থেকে বিশেষ ভাবে তৈরি করা
স্নান বেদীতে নিয়ে আসা হয়। পুরীর মন্দির
প্রাঙ্গনে বিশেষ ভাবে তৈরি করা এই মণ্ডপকে বলা
হয় স্নান মণ্ডপ। এটা এত উঁচু যে মন্দির প্রাঙ্গনের
বাইরে থেকেও বেদিতে উপবিষ্ট বিগ্রহ সমূহ
অবলোকন করা যায়।
অনুষ্ঠানের দিন স্নান মণ্ডপকে ঐতিহ্যবাহী ফুল,
বাগান ও গাছের চিত্রকল্প দ্বারা সজ্জিত করা হয়।
তোরণ এবং পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয়।
জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ ফুল দিয়ে
সাজানো হয়। এর পর বিগ্রহের উদ্দশ্যে ধুপ, ধুনা
অর্পণ করা হয়।
পুরীতে স্নানের জন্য সোনার তৈরি এক ধরনের
কুয়া থেকে জল আনা হয়। জল আনার সময়
পুরোহিতরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন
যাতে জল তাদের মুখনিঃসৃত কোন কিছু দ্বারা এমনকি
তাদের নিঃশ্বাস দ্বারা দূষিত না হয়।
স্নান মহোৎসবের পূর্বে জগন্নাথ,বলরাম এবং
সুভদ্রা দেবীকে সিল্কের কাপড় দ্বারা আবৃত করা
হয় এবং তারপর লাল এক ধরনের পাউডার দিয়ে
প্রলেপ দেওয়া হয়। ১০৮ টি স্বর্ণ পাত্র জল দ্বারা
পূর্ণ থাকে।এই জল দ্বারা অভিষেক করা হয়।
অভিষেকের সময় বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ,কীর্তন এবং
শঙ্খ বাজানো হয়। এরপর জগন্নাথ দেব এবং বলরাম দেবকে হাতি বেশে সাজানো হয়। এই সময় সুভদ্রা দেবীকে পদ্ম সাজে সাজানো হয়। স্নান যাত্রা উৎসবের পর ১৫ দিন ভগবানকে জনসাধারণ থেকে দূরে রাখা হয়।এই ১৫ দিন মন্দিরে কোন অনুষ্ঠান করা নিষেধ।অথাৎ তারা কোয়াইন্টে থাকে। এই সময় ভগবান জগন্নাথ , বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীকে
রতন বেদী নামে এক বিশেষ বেদীতে রাখা
হয়। এই সময়কে বলা হয় অনবাসর কাল মানে পূজা
করার জন্য অযোগ্য সময়। স্নান করানোর ফলে
বিগ্রহ সমূহ বিবর্ণ হয়ে যায়। এই ১৫ দিনে জগন্নাথ
দেবকে আগের সাজে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৬ তম
দিনে জগন্নাথ দেবকে আবার সবার দর্শনের জন্য
উন্মুক্ত করা হয়।

জয় জগন্নাথ।

NO.10  ;                      জয় শ্রীকৃষ্ণা

একজন ভক্ত ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন। তখন ভক্তের পাশে বসে থাকা একজন শিক্ষিত ব্যক্তি ভক্তকে বলিতে
লাগলেন যে,আপনারা এত ভগবান ভগবান করেন ভগবান কি আছেন ? ভগবানকে কি দেখেছেন কখনো ?
ভক্ত বললেন,আপনার কি মনে হয় ?
ব্যক্তিটি বললো আমি বিশ্বাস করি না ভগবান আছেন। কেন না বিজ্ঞান বলে সমস্ত সৃষ্টি এমনিতেই হয়েছে বিস্ফোরণের কারনে। আর পৃথিবী ও আপনা আপনিই চলছে। তখন ভক্ত বললেন ঠিক আছে,তাহলে বলুন তো এই রেল ট্রেনটি কি ভাবে হলো ?
লোকটি বলিলো বিজ্ঞানীরা বানিয়েছেন। তখন ভক্ত বললেন,কেন বিজ্ঞানীদের কেন এই ট্রেনটি বানাতে হবে। সব কিছুই তো আপনা আপনি হয়েছে। এই ট্রেনটি ও আপনা আপনিই হয়েছে। কেউ বানায়নি।
লোকটি বলল এটা কি করে সম্ভব। ট্রেন তো কেউ না বানালে তৈরী হতে পারেই না। আপনি একেবারে কিছুই বোঝেন না....!
তখন ভক্ত একটু হেসে বললেন,ভাল বলেছেন আমি বোকা। কিন্তু স্যার এই সামান্য ট্রেনটি যদি আপনা আপনি তৈরী হতে না পারে তাহলে এই মহাবিশ্ব ব্রহ্মান্ড, পৃথিবী,চন্দ্র,সূর্য্য কি করে আপনা আপনি হতে পারে কৃপা করে বলবেন কি ?
সেটা কিভাবে বিশ্বাস করেন ।
তখন ঐ ব্যক্তি চুপ করে রইলো। কোন উত্তর দিলো না। ভক্ত আবার বললেন, এই ট্রেনটি তো এমনিতেই চলছে আপনা আপনি ?
লোকটি বললো তা সম্ভব নয়। ড্রাইভার চালাচ্ছেন। ড্রাইভার ছাড়া ট্রেন চলতে পারে না। তখন ভক্ত প্রশ্ন করলেন,তাহলে এই বিশ্বব্রহ্মান্ডকিভাবে চালক বিহীন আপনা আপনি চলতে পারে কৃপা করে বলবেন কি ?
লোকটি তখনো চুপ রইলো। তখন ভক্ত লোকটিকে বললেন আচ্ছা আপনি বললেন ড্রাইভার ট্রেনটি চালাচ্ছে কিন্তু ড্রাইভার তো আমি দেখছি না। লোকটি হাসলো আর আবার বললো আপনি যে কি বলেন ?
ড্রাইভারকে এখান থেকে দেখবেন কি করে,ড্রাইভার তো ইঞ্জিনে। তাকে দেখতে হলে ট্রেন থেকে নেমে ইঞ্জিনের কাছে যেতে হবে। তারপর ড্রাইভার যদি দরজা খুলে তবে তাকে দেখা যাবে....!
তারপর ভক্ত বললেন মহাশয়,সাধারণ এই ট্রেনের ড্রাইভারকে দেখতে হলে এই সিট থেকে উঠে নিচে নেমে পায়ে হেটে ইঞ্জিনের কাছে যেতে হবে তাহলে যিনি সমস্ত সৃষ্টির মালিক, সমস্ত সৃষ্টির ও মহাবিশ্ব ব্রহ্মান্ডের চালক তাহাকে কি কিছু না করে,পরিশ্রম না করে দেখা যাবে।
করুণার সাগর পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে দেখতে হলে ভগবানের কাছে যেতে হবে,তাঁহাকে দেখার যোগ্য হতে হবে,তাঁহার কর্ম করিতে হবে,নাম গুনগান করতে হবে,ভক্তি ও ভজন,পূজো করতে হবে।

 NO.11          রথারুঢ় শ্রীজগন্নাথকে দর্শন করলে আত্মতত্ত্ব লাভ হয়

রথারুঢ় শ্রীজগন্নাথকে দর্শন করলে আত্মতত্ত্ব লাভ হয়! রথ হল আমাদের দেহ! জগন্নাথের রথ ২০৬টি কাঠ দিয়ে তৈরী, যা মানবদেহের ২০৬টি হাড়ের অনুরূপ! রথের ১৬টি চাকা; ৫টি জ্ঞানেন্দ্রিয়, ৫টি কর্মেন্দ্রিয় ও ষড়রিপুর প্রতীক! রথের রশি হল মন ও বুদ্ধি এর সারথি! এই দেহরূপ রথের রথী স্বয়ং ঈশ্বর! ঈশ্বর নিজের ইচ্ছায় এই শরীরকে চালিত করেন! (ঈশ্বর সর্ব্বভূতানি হৃদ্দেশেঽর্জুন তিষ্ঠতি! ভ্রাময়ন সর্ব্বভূতানি যন্ত্রারুঢ়ানি মায়ায়া!!) মানুষের ইচ্ছায় কিছু হয় না, সব ঈশ্বরের ইচ্ছায় হয়! উল্টোরথের পর জগন্নাথ রথ থেকে একবার নেমে গেলে ঐ রথে আর ওঠেন না! তখন ঐ রথ ভেঙে কাঠ সব পুড়িয়ে রান্নার কাজে লাগানো হয়! আমাদের শরীর থেকে যদি ঈশ্বর বেরিয়ে যান তবে ঐ শরীরের আর গুরুত্ব থাকে না, মৃত বলে ঐ দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়! সবকিছুর আধার সেই ঈশ্বরকে পেলে আর কিছু পাওয়ার বাকি থাকেনা! জগতের নাথ মহাপ্রভু শ্রীজগন্নাথ সকলের মঙ্গল করুন! শুভ রথযাত্রা! জয় জগন্নাথ জয় বলভদ্র জয় সুভদ্রা দেবী কী জয়!

NO.12 >অষ্টধা কালী 

অষ্টধা কালী ---

বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালী আদি শক্তি রূপে যোগীদের মন্ত্র ও তন্ত্র উদঘাটনে তত্‍পর। কালী দশমহাবিদ্যার প্রথমা দেবী ও বিশ্বসৃষ্টির আদি কারণ। পরমানন্দা সত্ত্ববিদ্যাধারিণী জগন্ময়ী রূপ তাঁর। বীজ থেকে যেমন অঙ্কুরের নির্গমন হয় এবং জীবের ক্রমবিকাশ হয় তেমনই সেই সব সৃজনই তাঁর সৃষ্টিশক্তি।

তান্ত্রিক মতে কালী 'অষ্টধা' বা 'অষ্টবিধ'। এই 'অষ্টধা' হলেন -- দক্ষিণাকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী, শ্রীকালী, ভদ্রকালী, চামুন্ডাকালী, শ্মশানকালী ও মহাকালী।

১) দক্ষিণাকালী -- 

অষ্টধা কালী প্রথম কালী রূপটি হলো দক্ষিণাকালী। দক্ষিণাকালী কালীর সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ মূর্তি। দেবীর  প্রচলিত ভাষায় নাম শ্যামাকালী। দক্ষিণাকালী করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভূজা এবং মুণ্ডমালাবিভূষিতা। দেবীর বামকরযুগলে সদ্যছিন্ন নরমুণ্ড ও খড়্গ; দক্ষিণকরযুলে বর ও অভয় মুদ্রা। দেবীর গাত্রবর্ণ মহামেঘের ন্যায়; তিনি দিগম্বরী। দেবীর গলায় মুণ্ডমালার হার; কর্ণে দুই ভয়ানক শবরূপী কর্ণাবতংস; কটিদেশে নরহস্তের কটিবাস। দেবীর দন্ত ভয়ানক; তাঁর স্তনযুগল উন্নত; তিনি ত্রিনয়নী এবং মহাদেব শিবের বুকে দণ্ডায়মান। তাঁর দক্ষিণপদ শিবের বক্ষে স্থাপিত। তিনি মহাভীমা, হাস্যযুক্তা ও মুহুর্মুহু রক্তপানকারিনী। দেবীর চতুর্দিকে শ্মশানে শিবাবাহিনী ঘোর রবে দেবীর জয়ধ্বনি করছেন। দক্ষিণ দিকের অধিপতি যম এই দেবীর নাম শুনে পলায়ন করেন, তাই ইঁনি দক্ষিণা কালী। এই দেবীর উপাসক দের যম ভয় থাকে না। দক্ষিণাকালীর পূজা করলে ত্রিবর্ণা তো বটেই সর্বোপরি সর্বশ্রেষ্ঠ ফলও দক্ষিণাস্বরূপ পাওয়া যায়।

২) সিদ্ধকালী --

সিদ্ধকালী দ্বিভুজা। সিদ্ধকালী তার দক্ষিণের হস্তের খড়গ দ্বারা চন্দ্রমণ্ডল ভেদন করছেন। সেই চন্দ্র মণ্ডলের গলিত রস দেবীর সর্বাঙ্গ প্লাবিত করছে। তিনি বাম হস্তের কপাল পাত্রে ঐ অমৃত ধারন করে পান করছেন। দেবী ত্রিনয়নী, মুক্তকেশী, দিগম্বরা। দেবীর কটিদেশ কাঞ্চী দ্বারা বদ্ধ। শিরে মনি মুক্ত খচিত মুকুট। দেবী দীপ্তজীহবা, দেবীর তনু কান্তি নীলোৎপল সদৃশ। কর্ণে তার রবি শশী তুল্য সমুজ্জ্বল কুন্ডল দ্বয়। দেবী মহাদেবের বুকে বাম চরণ স্থাপন করে আছেন, দক্ষিণ চরণ পেছনে। সিদ্ধকালী কেবল সাধক দের দ্বারাই পূজিতা। গৃহস্থ ব্যাক্তিরা দেবীর পূজো করেন না।

৩) গুহ্যকালী -- 

গুহ্যকালী মহামেঘপ্রভা, কৃষ্ণ বস্ত্র পরিধান করেন, লোলজিহ্বা, ঘোর দ্রংষ্ট্রা, কোটাক্ষী, হসন্মুখী। দেবীর কন্ঠে নাগ হার। ত্রিনেত্রা দেবীর মস্তকের গগনচুম্বী জটাজালে অর্ধচন্দ্র। দেবী শব আস্বাদনে আসক্তা। গুহ্যকালী নাগ যজ্ঞপবীত ধারন করেন, নাগশয্যেপরি বিরাজিতা। দেবীর কন্ঠদেশে পঞ্চাশৎ মুন্ড সংযুক্ত বনমালা, দেবী মহোদরী। সহস্র ফনা যুক্ত অনন্ত নাগ দেবীর শিরোপরি দেবীর চতুর্দিকে নাগ গণ ফণা তুলে বেষ্টন করে থাকেন। সর্পরাজ তক্ষক দেবীর বাম হস্তের কঙ্কণ এবং অনন্ত নাগ দক্ষিণ হস্তের কঙ্কণ। দেবী নাগ নির্মিত কাঞ্চী ও রত্ন নূপুর ধারন করেন। দেবীর বাম দিকে শিব সব্রুপ কল্পিত বৎস্য থাকে। দেবী দ্বিভুজা, দুইহাতে বরাভয় মুদ্রা। দেবীর শ্রুতি দ্বয় নরদেহসমাবদ্ধ কুন্ডল দ্বারা শোভিত থাকে। দেবী প্রসন্ন বদনা, সৌম্যা, নারদাদি মুনি গণ সেবিতা। অট্টহাস্যকারিনী এই দেবী সাধক দের অভিষ্ট দায়িনী। গুহ্যকালীর পূজো গৃহস্থ বাড়িতে হয় না। দেবী কেবল সাধক দের দ্বারাই পূজিতা। তবে কিছু পণ্ডিত এর মতে গ্রহ দোষ কাটানোর জন্য গৃহস্থ বাড়ীতে এই মায়ের পূজো করা যেতে পারে।

৪) শ্রীকালী --

শ্রীকালী মহাদেবের শরীরে প্রবেশ পূর্বক মহাদবের কন্ঠে স্থিত গরলে নিজ তনু কৃষ্ণ বর্ণ করেছেন। মহাদেবের ন্যায় শ্রীকালী ত্রিশূল ধারিনী, শ্রীকরে সর্প বলয় যুক্তা। লিঙ্গ পুরান মতে শ্রীকালী দারুক নামক এক অসুরকে বধ করেছিলেন । একারণে দেবীকে দারুকাসুর মর্দিনী কালীও বলা হয়।

৫) ভদ্রকালী -- 

তন্ত্র মতে ভদ্রকালী ক্ষুধায় ক্ষীণা। কোটোরাক্ষী, মসিমলিনমুখী, মুক্তকেশী। ভদ্রকালীর কর দ্বয়ে জ্বলন্ত অনল শিখার ন্যায় দীপ্ত পাশ যুগ্ম থাকে। দেবী পুরাণ বলেন – দেবী অন্তিমে মৃত্যুকালে ভদ্র বা মঙ্গল বিধান করেন, তাই তিনি ভদ্রকালী। কালিকাপুরাণ মতে ভদ্রকালী অতীব সুন্দর। অতসীপুস্পের ন্যায় গাত্র বর্ণ, মস্তকে জটায় উজ্জ্বল মুকুট, ললাটে অর্ধ চন্দ্র, কন্ঠে উজ্জ্বল নানা হার- নাগহার। অস্ত্রাদি দ্বারা সজ্জিত এই দেবীর পদতলে বাহন পশুরাজ থাকেন, দেবী বাম চরণে মহিষকে চেপে তাহাকে বধ করেন। দেবী এমন ভয়ঙ্করী রূপ হলেও অমঙ্গল ও ভয়-ভীতি হরণ করেন। ভদ্রকালীর পূজো গৃহস্থ ও সাধক উভয়েই করতে পারেন।

৬) চামুন্ডাকালী --

শ্রী শ্রী চন্ডী গ্রন্থানুসারে চন্ড ও মুন্ড নামক দুই দানব দেবী কৌষিকীর সাথে যুদ্ধ করতে আসলে দেবী তার ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করেন। সেখানে থেকেই দেবী চামুন্ডার আবির্ভাব হয়। ভয়ঙ্করী এই চামুন্ডাকালীর মূর্তি। চন্ড ও মুন্ড নামক দুই দানব কে বধ করার জন্য তিনি চামুন্ডা নামে খ্যাত হন। কালিকাপুরাণে এই চামুন্ডাকালী দেবীকে নীল পদ্মের ন্যায়, চতুর্ভুজা বলা হয়েছে। তিনি বিচিত্র নর কঙ্কাল ধারিনী, নরমুণ্ড মালিনী, ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিতা, অস্থি চর্মসার দেহ স্বরূপা। অতি ভীষনা, বিশাল বদনা, লোলজিহ্বা, ভয়ঙ্করী, কোটর গতা, আরক্ত চক্ষু বিশিষ্টা এবং সিংহ নাদে দিক মণ্ডল পূর্ণ কারিনী। চামুন্ডাকালী মাতা শব বাহনা। দুর্গাপূজার সময় সন্ধিক্ষণে এই দেবীর পূজা করা হয়। চামুন্ডাকালীর পূজো কেবল সাধক দের জন্যই। গৃহস্থ বাড়ীতে বা গৃহস্থ লোকেরা এই দেবীর পূজো করেন না।

৭) শ্মশানকালী -- 

শ্মশানকালী ঘন কৃষ্ণবর্ণা, শ্মশান বাসিনী, রক্তবর্ণ নেত্র, মুক্তকেশী, শুস্কমাংসা, অতি ভৈরবা, পিঙ্গল নয়না, কারণ- মাংস পূর্ণ পাত্র ধারিনী ও ভক্ষণকারিণী, ডান হস্তে নর মুণ্ড, বাম হস্তে পান পাত্র। দেবী স্মিতবক্ত্রা, সর্বদা আমমাংস চর্বণ তৎপরা, নগ্না, সদা মদ্যপানে প্রমত্তা। দেবী অতি উজ্জ্বল অলঙ্কার ধারিনী। পূর্বে ডাকাতেরা এই দেবীর কাছে পূজা দিয়ে ডাকাতি করতে যেতো। তন্ত্র সাধকেরা বীরাচারে এই দেবীর আরাধনা করেন। শ্মশানে এই দেবীর পূজা হয়। গৃহস্থ বাড়ীতে এই দেবীর পূজা বা ছবি রাখা হয় না।

৮) মহাকালী -- 

তন্ত্রসার গ্রন্থ অনুসারে মহাকালী পঞ্চদশ নয়না, মহারৌদ্রী। দেবীর হাতে শক্তি, শূল, ধনু, বাণ, খড়গ, খেটক, বর ও অভয় থাকে। মার্কণ্ড পুরাণে এই দেবীর বর্ণনা আছে। সৃষ্টির আদিতে ভগবান বিষ্ণুর কর্ণমলজাত মধু ও কৈটভ নামক দুই দানব প্রজাপতি ব্রহ্মাকে গ্রাস করতে উদ্যত হলে, ব্রহ্মা তখন যোগনিদ্রায় মগ্ন হরিকে স্তব করেন। কিন্তু ভগবান বিষ্ণু তখন যোগনিদ্রার প্রভাবে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন দেখে ব্রহ্মা তখন হরিনেত্রনিবাসিনী সেই দেবীর স্তব করলেন। ব্রহ্মার স্তবে তুষ্ট হয়ে দেবী , মহাকালী রূপে প্রকট হলেন। যোগনিদ্রা থেকে মুক্ত হয়ে ভগবান বিষ্ণু ঐ দুই দানবকে বধ করেন। এই দেবীর দশ মুখ, দশ হাত, দশ চরণ। তনু নীলকান্ত মণির মতো উজ্জ্বল। ত্রিনয়না দেবী খড়্গ, বাণ, ধনুক, শঙ্খ, চক্র, ত্রিশূল, গদা, পরিঘ- ভূষ্ণণ্ডী, নরমুণ্ড ধারন করে আছেন। কেবল সাধক রাই মহাকালীর পূজো করতে পারেন। কথিত আছে দেবী প্রথমে সাধককে নানা ভাবে ভয় দেখান। সাধক ভয় তুচ্ছ করে সাধনার পরীক্ষায় সফল হলে দেবী নানা রকম সিদ্ধি দান করেন।

.

ॐ সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তুতে॥

সৃষ্টিস্থিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি।
গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোহস্তুতে॥

শরণাগতদীনার্ত-পরিত্রাণপরায়ণে
সর্বস্যার্তিহরে দেবি নারায়ণি নমোহস্তুতে॥

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।
দূর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোহস্তুতে॥

ॐ কালি কালি মহাকালি কালিকে পরমেশ্বরি।
সর্বানন্দকরে দেবি নারায়ণি নমোহস্তুতে॥

NO. >13

এখানেই লোকশিক্ষক পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ নিজেকে কল্পতরু হিসেবে ঘোষণা করেন এই দিন। কাশীপুর বাগানবাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে ১ জানুয়ারি সকালবেলা গিরিশচন্দ্র ঘোষকে নিজের অবতারত্ব জিজ্ঞেস করেন ঠাকুর। 
গিরিশ ঘোষ প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘‘ব্যাস-বাল্মিকী যাঁর ইয়ত্তা করতে পারেনি, এই অধম গিরিশ তাঁর কি বলবে।’’
ঠাকুর প্রায় সমাধিস্থ অবস্থায় বলেন— ‘‘তোমাদের কি আর বলবো, আশীর্বাদ করি তোমাদের চৈতন্য হউক।’’ এই সময়ে ঠাকুর উপস্থিত গৃহী ভক্তদের বুক পিঠে হাত বুলিয়ে দেন। সেই স্পর্শে অলৌকিকের ছোঁয়া অনুভব করেছিলেন উপস্থিত গৃহী ভক্ত ও অন্যান্য ঠাকুর-ঘনিষ্ঠরা।
ঠাকুরের এই উক্তিকে পরম মহিমা বলে মনে করেন ভক্তরা। স্বীয় হৃদয়ে মানুষের দুঃখ যন্ত্রণা অনুভব করেই যেন ঠাকুরের এই আশীর্বাদ— চিন্ময় চৈতন্য সত্তার জাগরণের আশিস।
এই দিনটি তাই চিহ্নিত হয়ে রয়েছে জাগতিক চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে। এই দিনটিকে ‘কল্পতরু দিবস’ হিসেবে সবাই জানেন। কিন্তু এই প্রাপ্তি কোনও জাগতিকতায় আবদ্ধ নয়। এই প্রাপ্তি পারমার্থিক।

  NO.14   >                ~গুরু পূর্ণিমা ~

গুরু পূর্ণিমা (Guru Purnima) হল একটি বৈদিক প্রথা, যার মধ্য দিয়ে শিষ্য তাঁর গুরুকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে থাকেন। 
আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় গুরু পূর্ণিমা। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে গুরু পূর্ণিমার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই তিথিতেই মুণি পরাশর ও সত্যবতীর ঘরে মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি বেদব্যাস জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই এই দিনে মহর্ষি বেদব্যাসের জন্ম জয়ন্তীও পালন করা হয়। হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী, তিনিই চারটি বেদের ব্যাখ্যা করেছেন। বেদ বিভাজনের কৃতিত্ব তাঁকেই দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁর নাম বেদব্যাস। ১৮টি পুরাণ ছাড়াও তিনি রচনা করেন মহাভারত (Mahabharat) ও শ্রীমদ্ভাগবত গীতা (Bhagwat Geeta)। এই কারণে গুরু পূর্ণিমাকে ব্যাস পূর্ণিমাও বলা হয়।

বৌদ্ধ ধর্ম মতে, বোধিজ্ঞান লাভের পরে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় সারনাথে প্রথম শিষ্যদের উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ। হিন্দু পুরাণ মতে, ভগবান শিব বা মহাদেব হলেন আদি গুরু। সপ্তর্ষির সাতজন ঋষি হলেন তাঁর প্রথম শিষ্য - অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্থ্য, মরীচি এবং কেতু (নাম নিয়ে মতভেদ আছে)। শিব এই তিথিতে আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন এবং এই সাত ঋষিকে মহাজ্ঞান প্রদান করেন। তাই এই তিথিকে গুরু পূর্ণিমা আখ্যা দেওয়া হয়।

 

i)প্রাচীনকাল থেকেই এই দেশে গুরুদের সম্মানজনক স্থান দেওয়া হয়েছে।

ii)গুরুর দেখানো পথে চললে, কোনও ব্যক্তি শান্তি, আনন্দ ও মোক্ষ প্রাপ্ত করতে পারেন।

iii)তাই গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই গুরু পূর্ণিমা পালিত হয়ে আসছে।

iv)ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পূর্ণিমায় গুরুর পূজার্চনা করলে অক্ষয় আশীর্বাদ মেলে।

*গুরু পূর্ণিমার গুরুত্ব *

'গুরু' শব্দটি 'গু' এবং 'রু' এই দুটি সংস্কৃত শব্দ দ্বারা গঠিত। 'গু' শব্দের অর্থ 'অন্ধকার' বা 'অজ্ঞতা' এবং 'রু' শব্দের অর্থ 'অন্ধকার দূরীভূত করা'। 'গুরু' শব্দটি দ্বারা এমন ব্যক্তিকে নির্দেশ করা হয় যিনি অন্ধকার দূরীভূত করেন, অর্থাৎ যিনি অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যান তিনিই গুরু। গুরু আমাদের মনের সব সংশয়, সন্দেহ, অন্ধকার দূর করেন এবং নতুন পথের দিশা দেখান।

ভারত হল ঋষি-মুনিদের দেশ, যেখানে তাঁদের ঈশ্বরতুল্য বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, ভক্তদের প্রতি ভগবান রুষ্ট হলে গুরুই রক্ষার পথ দেখাতে পারেন। প্রাচীনকাল থেকেই এই দেশে গুরুদের সম্মানজনক স্থান দেওয়া হয়েছে। গুরুর দেখানো পথে চললে, কোনও ব্যক্তি শান্তি, আনন্দ ও মোক্ষ প্রাপ্ত করতে পারেন। তাই গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই গুরু পূর্ণিমা পালিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পূর্ণিমায় গুরুর পূজার্চনা করলে অক্ষয় আশীর্বাদ মেলে।

NO.15>         পবিত্র বেদ;

 পবিত্র বেদ; সভ্যতার প্রারম্ভে আপ্তকাম মহর্ষিগণ কর্তৃক ঈশ্বর হতে ধ্যানে প্রাপ্ত মহাবিশ্বের সংবিধান,একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমাদের আচরণ ও কার্যবিধি কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে সকল মানবজাতির সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করছি বৈদিক জীবনাচরণ পদ্ধতির সারমর্ম পবিত্র বেদের বিখ্যাত কিছু মন্ত্র ও মন্ত্রাংশের ভাবানুবাদ হতে।১. একজন বৈদিক ধর্মালম্বীর প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য থাকা উচিত তার চারিত্রিক উন্নয়ন।ওঁ বিশ্বানি দেব সবিতর দুরিতানি পরাসুব।যদ্ভদ্রং তন্ন আ সুব।।(যজুর্বেদ ৩০.৩)ভাবানুবাদ- হে পরমেশ্বর,আমি যাতে আমার খারাপ গুণসমূহ বর্জন করতে পারি এবং সদগুণ সমূহকে আয়ত্ত্ব করে নিজ চরিত্রের  উন্নতি ঘটাতে পারি।২.  মাহিরভূর্মা পৃদাকুর নমস্তআতানানর্বা প্রেহি (যজুর্বেদ ৬.১২) অর্থাৎ হে মনুষ্য,হিংস্র বা উগ্র হয়ো না। নমনীয় ও সত্যনিষ্ঠ জ্ঞানী হও।৩. ম ভ্রাতা ভ্রাতরম্ অরত্যহ অথ (অথর্ববেদ ৩.৩০.৩)অর্থাৎ   ভাই-ভাই,ভাই-বোন এবং একজন আরেকজনের সাথে কখনো বিবাদ করোনা, কখনো অন্য কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করোনা।৪.গরীব-দুঃখী ও বিপদগ্রস্তদের সামর্থ্য অনুযায়ী দান করা বৈদিক ধর্মালম্বীর কর্তব্য।শত হস্ত সমাহার,সহস্র হস্ত সং কীর(অথর্ববেদ ৩.২৪.৫)অনুবাদ-আয় করতে হাতটিকে শতটিতে বৃদ্ধি করো আর দান করতে তাকে সহস্রে রূপান্তরিত করো।"সামর্থ্যবানদের উচিত গরীবদের দান করা।তাদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া উচিত,মনে রাখা উচিত অর্থসম্পত্তি চিরস্থায়ী নয়।আজ যে ধনী সে ধন কাল তার নাও থাকতে পারে!(ঋগ্বেদ ১০.১১৭.৫)কেবলাঘো ভবতী কেবলাদী,যে দরিদ্রকে অভুক্ত রেখে নিজে ভোজন করে সে প্রকারান্তরে পাপ ই ভোজন করে।(ঋগ্বেদ ১০.১১৭.৬)৫.পানিদূষণ,বায়ুদূষণ,মাটি দূষণ করবেন না- মাপোমৌস্রাদ্ধিহিন্স্রী (যজুর্বেদ ৬.২২)অর্থাৎ পুকুর,নদী,খাল,বনাঞ্চল এসব দূষিত বা ধ্বংস করোনা।"বায়ুতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকি,একে দূষিতকরোনা।"(যজুর্বেদ ৬.২৩)পৃথ্বীম মা হিন্সিম অর্থাত্ মাটির দূষনকরোনা।(যজুর্বেদ ১৩.১৮)৬ .তেন ত্যাক্তেন ভূঞ্জীথা মা গৃধ কস্য স্বিদ্ধনম(যজুর্বেদ ৪০.১) অর্থাৎ পরের ধনে কখনো লোভ করোনা,ত্যাগের আদর্শ বজায় রেখে ভোগ করো। ৭.যেকোন ধরনের অশ্লীলতা বৈদিক ধরমালম্বীদের জন্য বর্জনীয়-অধঃ পশ্যস্ব মোপরি সন্তরাং পাদকৌ হর।মা তে কশপ্লকৌ দৃশন্ স্ত্রী হি ব্রহ্মা বভূবিথ।।(ঋগ্বেদ, ৮/৩৩/১৯)অর্থাৎ, হে পুরুষ ও নারী,তোমরা ভদ্র ও সংযত হও,দৃষ্টি অবনত রাখো,পোশাক-পরিচ্ছেদ ও আচরণে অশ্লীলতা ও অসভ্যতা বর্জন করো।(ঋগ্বেদ ৮.৩৩.১৯)৮.অশ্লীল কথা না বলা,শোনা বা দেখা নিয়ে পবিত্র বেদ এর উপদেশওঁ ভদ্রং কর্ণেভি শৃনুয়ামদেবা ভদ্রংপশ্যেমাক্ষ ভির্যজত্রা।স্থিরৈরঙ্গৈস্তস্টুবাঁ সস্তনুভির্ব্যশে মদেবহিতং যদায়ুঃ।।(যজুর্বেদ ২৫/১১)অর্থাৎ, হে ঈশ্বর,আমরা যেন তোমার যজন করি,কান দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় কথাবার্তা শুনি,চোখ দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় দৃশ্য দেখি।তোমার আরাধনাতে যে আয়ুস্কাল ও সুদৃড় দেহ প্রয়োজন তা যেন আমরা প্রাপ্ত হই।৯. দেবানাম ভদ্রা সুমতির্ঋজুযতাং.... দেবানাং সখ্যামুপ...(ঋগ্বেদ ১.৮৯.২)অর্থাৎ বিদ্বান ও সচ্চরিত্র লোকেদের সাথে বন্ধুত্ব করো,দুশ্চরিত্রদের অসৎদের বর্জন করো।১০.কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যকে গড়ে তোল-অয়ং মে হস্তো ভগবানয়ং...আমার এক হাতে কর্ম,অপর হাতে বিজয়(ঋগ্বেদ ১০.৬০.১২)১১.তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু(যজুর্বেদ ৩৪.১)অর্থাৎ সর্বভূতের কল্যাণের মহৎ চিন্তায় নিজের মনস্থির করো।১২.সত্যবাদ্যতি ত্বং সৃজন্তু(অথর্ববেদ ৪.১৬.৬) অর্থাৎ নিজেকে সত্যবাদী হিসেবে সৃজন করো।১৩.একজন বৈদিক ধর্মালম্বী সর্বভূতে সমদর্শী হবে।তার জন্যে কেউ ছোট নয়,কেউ বড় নয়।সকলেই এক অমৃতের সন্তান,সকলেই ভাই ভাই।অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাসএতে সং ভ্রাতারো তাবৃধুঃ সৌভগায়যুবা পিতা স্বপা রুদ্রএযাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ ॥(ঋগবেদ ৫.৬০.৫)বঙ্গানুবাদ : মানুষের মধ্যে কেহ বড় নয়, কেহ ছোট নয়।ইহারা ভাই ভাই । সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে । ইহাদের পিতা তরুণ শুভকর্ম ঈশ্বর এবং মাতা জননীরূপ প্রকৃতি। পুরুষার্থী সন্তানমাত্রই সৌভাগ্য প্রাপ্ত হন।১৪.একজন বৈদিকের সপ্ত মর্যাদা-সপ্ত মর্যাদা কবয়স্তস্তক্ষুস্তাসামেকামিদভ্যয়হুরো গাত্।। (ঋগ্বেদ ১০.৫.৬)"সপ্ত হল নিষেধসমূহ যা নির্দেশিত হয়েছে,জ্ঞানীগণ যাকে সবসময় এড়িয়ে চলেন,যেগুলো মানুষকে সর্বদাই বিপথগামী করে।"কী সেই সপ্ত মহাপরাধসমূহ? মহর্ষি যাস্ক তাঁর নিরুক্ত সংহিতায় বর্ননা করেছেন,"চুরি,অশ্লীলতা ও ব্যভিচার,হত্যা,ভ্রুণনিধন,অগ্নিসংযোগ,নেশা/ মদ্যপান,অসততা।"১৫.বৈদিক ধর্ম মানবতার ধর্ম। এখানে কোন ধরনের অস্পৃশ্যতা প্রথার কোন সুযোগ নেই-সমানী প্রপা সহ বোরন্নভাগঃ সমানে যোক্ত্রে সহ বো যুনজ্মি।সমঞ্চোহগ্নিং সযপর্যতারা নাভিমিবাভিতঃ।।(অথর্ববেদ ৩.৩০.৬)অর্থাৎ,হে মনুষ্যগণ তোমাদের ভোজন ও আহার হোক একসাথে,একপাত্রে, তোমাদের সকলকে এক পবিত্র বন্ধনে যুক্ত করেছি,তোমরা সকলে এক হয়ে পরমাত্মার উপাসনা(যজ্ঞাদি,ধ্যান) করো ঠিক যেমন করে রথচক্রের চারদিকে অর থাকে!১৬. সকল মানব একতাবদ্ধ হও,সকলে একসাথে পরস্পর মিত্র হও,সকলের মন,চিত্ত এক হোক,সকলে সুখী হোক।(ঋগ্বেদ, মন্ডলঃ ১০, সুক্তঃ ১৯১,মন্ত্র ২,৩,৪)সংগচ্ছধ্বং সংবদধ্বং সং বো মনাংসি জানতাম্। দেবাভাগং য়থাপূর্বে সং জানানা উপাসতে।।২।। অর্থঃ- প্রেমপূর্বক চল সবাই, যেন মোরা জ্ঞানী হই। পূর্ব্বজ বিদ্বানদের অনুসরণে, কর্তব্য পালনে ব্রতী হই।। সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী সমানং মনঃ সহ চিত্তমেষাম্। সমানং মন্ত্রমভি মন্ত্রয়ে বঃ সমানেন বো হবিষা জুহোমি।।৩।। অর্থঃ- হোক মতামত সমান সবার, চিত্ত-মন সব এক হোক। একই মন্ত্রে যুক্ত সকলে, ভোগ্য পেয়ে সবে তৃপ্ত হোক।। সমানী ব আকুতিঃ সমানা হৃদয়ানি বঃ। সমানমস্তু বো মনো য়থা বঃ সু সহাসতি।।৪।। অর্থঃ- হোক সবার হৃদয় তথা সংকল্প অবিরোধী সদা। মন ভরে উঠুক পূর্ণপ্রেমে, বৃদ্ধি হোক সুখ সম্পদা।। বৈদিক জীবনবিধি মেনে চলুন,একটি মহৎ,শান্তিময় ধরণী গড়ে তুলুন।ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি

bottom of page